মতামতসাহিত্য

শিল্প ও শিল্পী


Raihan Ullahবাঙালি অন্য যে কোনো জাতি থেকে একটু বেশি রসিক। সে হিসেবে এ গোষ্ঠী শিল্পরসিকও। শিল্পজনেরা শিল্পের সম্মানে এ অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে থাকেন। এ পন্থা শিল্পের ডালপালায় যেমন পানি দিয়েছে, তেমনি আবার তা প-ও করেছে। অনেকেই তার একান্ত নিজস্ব গণ্ডি সাজিয়েছেন শিল্প মিশ্রণে। এ মিশ্রণ দু’ভাবে হয়। এক. শিল্পের বহিরাঙ্গ সেটে নিজেকে শিল্পরসিক বানানো। দুই. নিজের একান্ত নিগঢ়ে শিল্পকে পোষা। যে কোনো পোষণ ভিন্নতা নিয়েই আসবে। এটাই স্বাভাবিক। এমনকি সহজাতও। নিজের কৃষ্টি-শিকড়-নিজস্বতা বহিরাঙ্গে রেখে শিল্পবোদ্ধা সাজা অথবা এই শিল্প মননে ধারণ করে শিল্পবোদ্ধা হওয়া ভিন্নতর। সময় পরিক্রমায় দু’মেরুর এমন গোষ্ঠীর সমান্তরাল যাপন চলছে। উভয়ই বোঝে শিল্প তোষণের রকমফের। তাই গভীরে প্রবেশ আপাত বাহুল্যতা। তারপরও কায়ীক চেষ্টা অন্য গভীরতা খোঁজে।
শিল্প দু’ভাবে ধরা দেয়। এক. নিজে শিল্পী হওয়ার আজীবন সংগ্রামে। দুই. শিল্প শিল্প খেলা খেলে। প্রথমটিতে পদে পদে বন্ধুরতা। এ পথ পরিক্রমায় গরলের দেখা যেমন মেলে, তেমনি  সর্বশেষ বা বিভিন্ন বাঁকে অমৃতও ঢের। দ্বিতীয়টি করতেও মেধা প্রয়োজন। কোনো কিছু নিয়ে খেলাতো আর সহজ  হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এ যে খেলা, প্রতিক্ষণের উপলব্ধি। এ উপলব্ধিতে শিল্পসুখ নেই। তার সবটাই যে অসুখ। প্রথমটির পথ দুর্গম হবে স্বভাবতই। কারণ, শিল্পী হয়ে ওঠা সহজতর হবে কেন? একজীবন পাশে থুয়ে বা ছুড়ে ফেলতে পারলে তবেই না শিল্পী। ভিন্ন প্রেক্ষাপটে দুটিরই জোয়ার-ভাটা চলে। শিল্পী খুঁজছে নিজ শিল্পসুখের সুখ। তার জোয়ার অদৃশ্য হলেও অত্যন্ত প্রবল। অন্যদিকে শিল্পসুখী না হয়েও ইহজাগতিক পাওয়ার মনস্কামে নিজেই করে সুখ সুখ যাপন! কেমন যাপন? ঠিক সহসা মেলা উত্তরের মতন। সহসা যা মেলে তার রূপ আর আরাধ্য কিছুর রূপ ভিন্নতর হবেই। একটাতে কর্তা নিজে বিষয়ও। অর্থাৎ শিল্পী ও শিল্প দুটোই। অন্যটি প্রথমটি কেন্দ্রীক। স্বভাবতই প্রথমটির অবশ্যকতা, ধ্রুবতা। দ্বিতীয়টি অস্তিত্তহীন। প্রথমটি যাপিত, দ্বিতীয়টি যাপন। প্রথমটি ধ্রুব, দ্বিতীয়টি বিলীন।

লেখক : কবি ও সাংবাদিক