এডিটর্স চয়েজভ্রমণ ও ইতিহাস

কাশ্মীর নিয়ে ভারত পাকিস্তানের দ্বন্দ্বের ইতিহাস

শুভ সকাল ডেস্কঃ কাশ্মীর। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত একটি ভূখণ্ডের নাম। প্রকৃতি যেন নিজ হাতে সাজিয়েছে হিমালয়ের পাদদেশের এই ভূ-স্বর্গকে। এই কাশ্মীরের জন্য গত সাত দশকে প্রাণ দিতে হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার মানুষকে।  এর নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে, রেষারেষিতে প্রতিবেশী ভারত এবং পাকিস্তান লড়েছে তিন-তিনটি যুদ্ধ, আরও শকয়েকবার মুখোমুখি হয়েছে সম্মুখযুদ্ধের। কাশ্মীর সংকটের ইতিহাস ভারত-পাকিস্তানের জন্মের থেকেও পুরনো। 

১৯৪৭ সাল। ভারতবর্ষে শেষবারের মতো অবনমিত হয় ব্রিটিশ পতাকা। দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে জন্ম নেয় ভারত এবং পাকিস্তান নামের দুই রাষ্ট্র। ধর্মের ভিত্তিতে দুই দেশ ভাগ হলেও কাশ্মীর রয়ে যায় স্বতন্ত্র ভূখণ্ড হিসেবে। ব্রিটিশদের পক্ষ থেকে বলা হয়, গণভোটের মাধ্যমে সাধারণ কাশ্মীরিরাই নির্ধারণ করবে নিজেদের ভবিষ্যত।

সে সময় কাশ্মীরের শাসক ছিলেন মহারাজা হরি সিং। গণভোটের দাবি উপেক্ষা করে তিনি ভারতের সঙ্গে যোগ দিতে চাইলে, কাশ্মীরের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা এর বিরোধিতা করে। তা উপেক্ষা করে ভারতের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন রজা হরি সিং। পাকিস্তান এর তীব্র বিরোধিতা করলে, ১৯৪৭ সালেই প্রথমবারের মতো ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের যুদ্ধ বাঁধে। প্রায় …মাস ধরে চলা যুদ্ধে নিহত হয় উভয় দেশের প্রায় দশ হাজার সেনা।

জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় উভয় দেশের সেনা প্রত্যাহার ও গণভোট আয়োজনের শর্তে শেষ হয় যুদ্ধ। কিন্তু সেনা প্রত্যাহার না হওয়ায় গণভোট আর অনুষ্ঠিত হয়নি। ১৯৪৮ সালে নিয়ন্ত্রণ রেখার মাধ্যমে কার্যত দুই ভাগ হয়ে যায় কাশ্মীর। এর ৪০ শতাংশের দখল পায় পাকিস্তান। আর প্রায় ৬০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ নেয় ভারত। পরে একে প্রদেশ হিসেবে ঘোষণা করে নয়াদিল্লী। যা দেশটির একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ। 

১৯৬২ সালে ভারতের সঙ্গে চীনের যুদ্ধ বাঁধে। সেসময় ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের আকসাই অংশটি দখল করে নেয় চীন। অন্যদিকে ১৯৬৩ সালে পাকিস্তান কাশ্মীরের কারাকোরাম অঞ্চলটি চীনের হাতে ছেড়ে দেয়। এরমাধ্যমে তিনভাগে ভাগ হয়ে যায় ভূ-স্বর্গ।

কাশ্মীর ইস্যুতে ১৯৬৫ সালে দ্বিতীয়বারের মতো যুদ্ধে জড়ায় ভারত এবং পাকিস্তান। নিহত হয় ভারতের ৩ হাজার এবং পাকিস্তানের প্রায় ৪ হাজার সেনা। দু’পক্ষেই আহত হয় কয়েক হাজার করে। ক্ষয়ক্ষতি হয় ব্যাপক।   

১৯৮৪ সালে কাশ্মীরের সিয়াচেন হিমবাহ এলাকার দখল নেয় ভারত। এরপর ১৯৯৯ সালে ভারত-পাকিস্তান লিপ্ত হয় তৃতীয় যুদ্ধে। যা কারগিল যুদ্ধ নামে পরিচিত। এতে হতাহতের সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও ধারণা করা হয়, যুদ্ধে ভারতের ৫ হাজার এবং পাকিস্তানের ৪ হাজার সেনা নিহত হয়। যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যস্থতায় অস্ত্র বিরতির আগে, প্রায় তিন মাস ধরে চলা কারগিল যুদ্ধই ছিল সবচেয়ে বিধ্বংসী।

ভারত পাকিস্তান সৃষ্টির আগ থেকেই বিভিন্ন শাসকদের কাছে নিপীড়িত হয়ে আসছিল সাধারণ কাশ্মীরিরা। ১৯৩১ সালে কাশ্মীরের তৎকালীন শাসক মহারাজার বিরুদ্ধে অন্দোলনে ২২জন নিহত হন। মূলত এরপর থেকেই সাধারণ কাশ্মীরিরা নিজেদের অধিকার আদায়ে স্বোচ্চার হতে শুরু করে।