বিনোদন

চুল দিয়েই চমকে দিলেন নিশা


masidrono2মেহরিন ইসলাম নিশা। লাক্স তারকা হিসাবে পরিচিতি পেলেও একটি বিজ্ঞাপন তাঁর ক্যারিয়ারের পালে লাগায় সুবাতাস। তারপর থেকে নাটকের ফাঁকে বেছে বেছে কাজ করেছেন টিভিসিতেও। এই তারকার বিজ্ঞাপন ক্যারিয়ার নিয়ে লিখেছেন মাসিদ রণ। ছবি তুলেছেন শামছুল হক রিপন

‘সাধারন পরিবারের অতি সাধারন একটি মেয়ের তারকা হওয়ার স্বপ্ন। দু চোখে নিশিদিন একে চলেছেন শত শত ছবি। কখনো স্বপ্ন পুরুষের সঙ্গে ভেসে বেড়াচ্ছেন মেঘের রাজ্যে, কখনো ডিজনি ওয়ার্ল্ডের কোন পরিচিত নারী চরিত্রের আদলে পোশাক পরে হেটে চলেছেন রেড কার্পেঠে, চারপাশে অসংখ্য ভক্ত-দর্শনার্থি, ক্যামেরার অগোছাল ফ্ল্যাশ মেয়েটিকে করে তুলছে সত্যিকারের এক সুপারস্টার। মেয়েটি স্বপ্ন দেখতেই পারেন। তার আছে তন্বি শারিরিক গড়ন, গৌর বর্ণের মিষ্টি মুখশ্রি আরও আছে বুকভরা স্বপ্ন। তবে বাধ সাধছে তাঁর চুল। কথায় আছে ‘দীঘল কালো চুলে রূপবতী কণ্যে’। বাঙালি মেয়ের সেই চুল যদি কারো মনে না ধরে, সে কি করে হবেন সবার স্বপ্নকণ্যা?

এমন সময় দেশের বিশিষ্ট এক রূপ বিশেষজ্ঞ মেয়েটিকে পরামর্শ দেন জুই নারকেল তেল ব্যবহারের, তাতে মেয়েটি হবে স্বয়ংসম্পূর্ণা। মেয়েটি কথামতো জুই নারকেল ব্যবহার করে সবাইকে চমকে দেন। তিনি পৌঁছে যান কাক্সিক্ষত লক্ষে।’ হ্যা ঠিকই ধরেছেন এটা জুই নারকেল তেলের একটি জনপ্রিয় টেলিভিশন বিজ্ঞাপনের গল্প। এই মেয়েটির চরিত্রে রূপদান করেন ২০১০ সালের লাক্স তারকা মেহরিন ইসলাম নিশা। এর আগে তিনি কাজ করেছেন নাটকে এমনকি একটি টিভিসিতেও। তবে সেগুলো তাকে সেই অর্থে পরিচিতি দিতে পারেনি। তবে এই টিভিসিটি তাঁকে করে তোলে তুমুল জনপ্রিয়। তাঁর ক্যারিয়ারের পালে লাগে সুবাতাসের ছোঁয়া।

সবচেয়ে অবাক করার মতো বিষয় হলো এই বিজ্ঞাপনে যেমন সুন্দর চুল দিয়ে একটি মেয়ে সবার নজর কাড়ে, ঠিক তেমনি নিশাও এতে কাজের জন্য নির্বাচিত হন তাঁর দীঘল কালো চুলের জন্যই। ২০১২ সালের মাঝামঝিতে এই টিভিসিটি নির্মান করেন জনপ্রিয় পরিচালক অমিতাভ রেজা। মিডিয়া কমের এই টিভিসির জন্য অডিশন দেন অনেক তারকা। কিন্তু তাদের মধ্যে নিশার চুলই কতৃপক্ষের মনে ধরে, তাই তিনি হয়ে যান চুলের রানী। নিশার সুন্দর চুলকে আরো সুন্দর করতে ভারত থেকে বিপাশা বসুর হেয়ার এক্সপার্টকে আনা হয়। বিশাল সেট ফেলে দুই দিন শুটিং হয়েছিল এফডিসিতে। তাঁর সঙ্গে স্ক্রিনে দেখা যায় কানিজ আলমাস খানকেও। অনেক মজার ছিল সেই অভিজ্ঞতা, বললেন নিশা। ‘অমিতাভ রেজা এই টিভিসির শুটিংয়ের আগে থাইল্যান্ডে গিয়েছিলেন। তাই আমাকে ইন্সপায়ার করতে তিনি বললেন, ‘নিশা তুমি যতবার এক টেকে শট ওকে করতে পারবা, তত শ’ বাথ পাবা। দেখা গেল পুরো শটিং শেষে আমি উপহার হিসাবে ৫০০ বাথ পেয়েছিলাম’ হাসতে হাসতে বললেন নিশা।nisha

এই টিভিসির রেস কাটতে না কাটতেই নিশা করেন নাফিজের নির্দেশনায় প্রান ডালের টিভিসি। এখানে তিনি জনপ্রিয় মডেল আসিফের বিপরীতে কাজ করেছেন। এই টিভিসির গল্পটা বেশ রোমান্টিক। ট্রেনের জন্য একটি মেয়ে অপেক্ষা করছে। অপেক্ষার প্রহর যেন কাটছেই না। হঠাৎ ঝুম বৃষ্টিতে প্রিয়জনের কাছে যাওয়ার তাড়াটা যেন একটু বেশিই বোধ করছে মেয়েটি, মুখেও বিরক্তির ছাপ। বার বার চোখ যাচ্ছে ঘড়ির কাটায়। এগুলোর কোনটাই চোখ এড়ায়নি পাশে বসে থাকা যুবকের। সে চট করে দোকান থেকে প্রাণ ডাল কিনে এনে মেয়েটিকে দিল, আর বলল- প্রান ডাল, মুঠোয় মুঠোয় সময় পার! এখানে চমৎকার অভিনয় করে সবাইকে চমকে দেন নিশা। আসলে অভিনয়টা ভালো করতে পারেন বলেই তার মুখের ডায়লগ আর এক্সপ্রেশনগুলো সহজেই মানুষের মনে ধরে। এই বিজ্ঞাপনের অভিজ্ঞতা খুব মধুর নিশার কাছে।nisha (5)

তিনি বললেন, ‘এক রেস্টুরেন্টে আমার বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম, সেখানেই বিজ্ঞাপন নির্মাতা নাফিজ ভাই আমাকে দেখেন, কিন্তু তিনি জানতেন না যে আমি লাক্স থেকে এসেছি বা মিডিয়াতে কাজ করি। তবুও আমাকে বলে ফেললেন, আমার বিজ্ঞাপনের জন্য নতুন একজন মডেল খুজছি, তুমি কি করবে? হেসে বললাম, ‘আমি তো নিয়মিত কাজ করি’। নাফিজ ভাই ট্রেনের জন্য অপেক্ষার গল্পটি আমাকে শোনালেন। তাই আমি ভেবেছিলাম শুটিং হবে কোন মফস্বল এলাকার ট্রেন স্টেশনে। তখন আমার পরীক্ষা চলছিল। তাই কাজটি ঢাকার বাইরে গিয়ে করতে পারব কি না নিশ্চিত ছিলাম না। কিন্তু তিনি আমাকে আশ্বস্ত করলেন, ঢাকাতেই শুটিং হবে। তার দুদিন পর শুটিং হয়েছিল কোক স্টুডিওতে। আমি সেখানে গিয়ে দেখি এলাহি কান্ড! কাগজ দিয়ে নকল ট্রেন আর ট্রেন লাইন বানানো হয়েছে। এমনকি ওয়েটিং রুম সবই হার্ডবোর্ডের তৈরি। তাদের এই আয়োজনে মুগ্ধ হয়ে যাই। মন দিয়ে কাজ করেছিলাম বলে মাত্র ৪-৫ ঘন্টায় পুরো শুটিং শেষ হয়ে যায়। প্রচারের পর খুব ভালো সাড়া পাই।’nisha3

নিশার কাছে তাঁর এই টিভিসিটি সবচেয়ে প্রিয়। তার মতে, ‘এই কাজটি খুব ক্লাসি হয়েছে। বৃষ্টি, জিঙ্গেলের সুর-তাল-লয় আর দুজন অপরিচিত যুবক-যুবতির রসায়ন সবমিলিয়ে একটা অন্যরকম দোত্যনা তৈরি করে।’

এরপর নিশা করেছেন পারট্রেক্স ফর্নিচারের একটি টিভিসি। নব দম্পতির পারটেক্স ফার্নিচারে ঘর সাজানো নিয়ে এই টিভিসিটিও বেশ জনপ্রিয়তা পায়। নিশার প্রথম টিভিসি ছিল এলিট পেইন্ট। আর সবশেষে করেন ডানো গুড় দুধের একটি এবি। মাঝে অবশ্য ভ্যাসলিনের কাজও করেছেন। সবমিলিয়ে মাত্র হাফ ডজন কাজ করেও তিনি মডেল হিসাবে সবার মনে আলাদা জায়গা পেয়েছেন। কিন্তু এই চাহিদা কাজে লাগিয়ে অনেকের মতো হিজিবিজি একগাদা কাজ করেন নিনিশা। এ বিষয়ে তার অভিমত, ‘আমি একটি কাজ করে যদি দর্শকের মনের মধ্যে জায়গা পাই, তাহলে নিম্নমানের এক গাদা কাজ করে কি লাভ? তার চেয়ে নিজের ইমেজের সঙ্গে যায় এমন প্রোডাক্ট ও গল্প পেলেই কাজ করি। আর বিজ্ঞাপনের সংখ্যা এতো কম হওয়ার কারণ হলো আমার নিয়মিত পড়াশোনায় সময় দেওয়া আর ধারাবাহিক নাটকে অধিকাংশ সময় বরাদ্দ থাকা। তবে এখন থেকে ধারাবাহিক কমিয়ে দিয়ে ভালো কিছু বিজ্ঞাপন আর একক নাটক করতে চাই। এতে প্রচারটা বেশিই হয়।’