ক্যারিয়ার

নীল জলের হাতছানি


দ্রুত প্রতিষ্ঠা, দেশসেবা, আর্থিক সচ্ছলতা, চ্যালেঞ্জ-সব কিছুই পেতে পারেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যোগ দিয়ে। সম্প্রতি অফিসার ক্যাডেট এবং সরাসরি কমিশন্ড অফিসার নিয়োগের আলাদা দুটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে নৌবাহিনী। বিস্তারিত জানাচ্ছেন ইফতেখার শুভ

 

এইচএসসির পরই অফিসার ক্যাডেট

নৌবাহিনীর অফিসার ক্যাডেট পদে আবেদন করার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পদার্থ ও উচ্চতর গণিতসহ বিজ্ঞান বিভাগে আলাদাভাবে জিপিএ ৪.০০ পেতে হবে। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের ‘ও’ লেভেল এবং ‘এ’ লেভেল উভয় পরীক্ষায় পদার্থ ও গণিতসহ ছয়টি বিষয়ের মধ্যে ন্যূনতম তিনটি বিষয়ে গ্রেড A ও দুইটি বিষয়ে গ্রেড B থাকতে হবে। ২০১৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরাও আবেদন করতে পারবেন। বিবাহিত হলে আবেদন করা যাবে না। ১ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে বয়স সাড়ে ১৬ থেকে ২১ বছরের মধ্যে হতে হবে। তবে সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ১৮ থেকে ২৫ বছর। পুরুষ প্রার্থীদের ন্যূনতম উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি এবং বুকের মাপ স্বাভাবিক ৩০ ইঞ্চি ও সম্প্রসারিত ৩২ ইঞ্চি। আর ওজন হতে হবে ৫০ কেজি। মহিলা প্রার্থীদের বেলায় ন্যূনতম উচ্চতা ৫ ফুট ১ ইঞ্চি এবং বুকের মাপ স্বাভাবিক ২৮ ইঞ্চি ও সম্প্রসারিত ৩০ ইঞ্চি। ওজন হতে হবে ৪০ কেজি।

 

আবেদন প্রক্রিয়া

বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে অনলাইন ও সরাসরি উভয় পদ্ধতিতেই আবেদন করা যায়। অনলাইনে আবেদন করতে ট্রাস্ট ব্যাংক মোবাইল মানির (টিবিএমএম) গ্রাহক হতে হবে। এ ক্ষেত্রে টিবিএমএম অ্যাকাউন্টে ন্যূনতম ৫২০ টাকা রেখে TrustMM<space>BNRF<space>O<space>PIN<space>Candidate’s Mobile Number লিখে ১৬২০১ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে। তবে গ্রামীণফোন গ্রাহকদের এসএমএস পাঠাতে হবে ০১১৯০০১৬২০১ নম্বরে। ফিরতি এসএমএসে প্রার্থীকে একটি ট্রানজেকশন আইডি দেওয়া হবে। এরপর www.joinnavy.mil.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে Apply Now অপশনে ক্লিক করে ফরম পূরণ করা যাবে। পেমেন্ট অপশনে ট্রানজেকশন আইডি নম্বরটি দিতে হবে। প্রার্থীর ‘কলআপ লেটার’ পাঠানো হবে অনলাইনে।

সরাসরি আবেদনের ক্ষেত্রে ট্রাস্ট ব্যাংকের যেকোনো শাখা থেকে ‘বিএন রিক্রুটমেন্ট ফান্ড’-এর অনুকূলে ৫০০ টাকা ফি জমা দিতে হবে। এরপর নৌবাহিনী সদর দপ্তর, নৌবাহিনী ভর্তি ও তথ্যকেন্দ্র কিংবা জেলা সশস্ত্র বাহিনী বোর্ড থেকে ফরম সংগ্রহ করে পূরণ করে জমা দিতে হবে। আবেদনের শেষ তারিখ ২৩ এপ্রিল।

 

নিয়োগ প্রক্রিয়া

নৌবাহিনীর ক্যাডেট নির্বাচনের প্রক্রিয়া কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষা, লিখিত পরীক্ষা, আইএসএসবি ও চূড়ান্ত ডাক্তারি পরীক্ষার পরই মেলে নৌ সদর থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন।

 

প্রাথমিক স্বাস্থ্য ও মৌখিক পরীক্ষা

আবেদনকারীদের আবেদন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাদের স্বাস্থ্য ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে। এ পরীক্ষা হবে ১১-১৪ মে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা কেন্দ্র্রে। প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় প্রার্থীর বয়স, শারীরিক যোগ্যতা (উচ্চতা, ওজন, বুকের মাপ) ইত্যাদি দেখা হয়ে থাকে। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের একই দিনই মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এসএসসি ও এইচএসসি স্তরের প্রশ্ন করা হয় মৌখিক পরীক্ষায়। সাধারণ জ্ঞান থেকেও প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। প্রার্থীর ব্যক্তিত্ব, স্মার্টনেসও দেখা হয় এ পরীক্ষায়।

 

লিখিত পরীক্ষা

মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ১৫ মে লিখিত পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে। ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হবে তিনটি বিষয়ে-আইকিউ, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান। বুদ্ধিমত্তা বিষয়ে ৪০, ইংরেজিতে ৩০ ও সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে ৩০ নম্বর থাকবে। সাধারণত উচ্চ মাধ্যমিক স্তর এবং বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি থেকে প্রশ্ন হয়ে থাকে।

আইএসএসবি পরীক্ষা

লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের আন্তবাহিনী নির্বাচন পর্ষদে (আইএসএসবি) পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। আইএসএসবি পরীক্ষা নেওয়া হয় চার দিন ধরে। এখানে প্রার্থীর মনস্তাত্ত্বিক, বুদ্ধিমত্তা, শারীরিক দক্ষতা, ব্যক্তিত্ব, বিচারবোধ, উপস্থিত বুদ্ধি, পরিকল্পনা ক্ষমতা, নেতৃত্বের দক্ষতা ইত্যাদি দেখা হয়।

 

প্রথম দিন

সাধারণভাবে সকাল সাড়ে ৭টার মধ্যে প্রার্থীকে কেন্দ্রে উপস্থিত হতে হয়। প্রথমেই বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষা হয়। এ পরীক্ষার দুটি অংশ থাকে-ভাষাগত ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য। ভাষাগত পরীক্ষায় ১০০টি প্রশ্নের জন্য ৩৫ মিনিট ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য পরীক্ষায় ৩৮টি প্রশ্নের জন্য ৩৫ মিনিট সময় দেওয়া হয়। বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষার পর প্রার্থীকে পিকচার পারসেপশন অ্যান্ড ডেসক্রিপশন টেস্টে (পিপিডিটি) অংশ নিতে হয়। ছবি দেখে ইংরেজিতে একটি গল্প লিখতে হয় এবং এর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করতে হয় এ পরীক্ষায়। এ দুই পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে ফল ঘোষণা করা হয়। যারা উত্তীর্ণ হতে পারে না, তাদের বিদায় নিতে হয়। টিকে যাওয়া প্রার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এখানে থাকে বাংলা ও ইংরেজি বাক্য রচনা, বাক্য সম্পূর্ণকরণ, ছবি দেখে গল্প লিখন, অসম্পূর্ণ গল্প সম্পূর্ণকরণ ও আত্মসমালোচনা। এরপর প্রার্থীদের নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বাংলা ও ইংরেজিতে রচনা লিখতে হয়। এর মাধ্যমে শেষ হয় প্রথম দিনের পরীক্ষা।

 

দ্বিতীয় দিন

এ দিন কোনো লিখিত পরীক্ষা নেই। প্রার্থীকে নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বাংলা ও ইংরেজিতে দলগত আলোচনা, বক্তৃতা, শারীরিক সামর্থ্যের পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এরপর একজন ডেপুটি প্রেসিডেন্টের কাছে দিতে হয় মৌখিক পরীক্ষা। এই মৌখিক পরীক্ষা প্রার্থীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডেপুটি প্রেসিডেন্ট এই মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থীর সাহস, আত্মবিশ্বাস, তাৎক্ষণিক বুদ্ধি ইত্যাদি বিষয় পর্যবেক্ষণ করে থাকেন।

 

তৃতীয় দিন

এ দিন প্রার্থীকে প্ল্যানিং ও কমান্ড টেস্টে অংশ নিতে হয়। এ দুটি পরীক্ষায় প্রার্থীর নেতৃত্ব ও পরিকল্পনার দক্ষতা সম্পর্কে যাচাই করা হয়।

 

চতুর্থ দিন

চতুর্থ দিন ফল ঘোষণা করা হয়। সাধারণত দুপুর ১২টার পর নিজ নিজ গ্রুপের ডেপুটি প্রেসিডেন্ট ফল ঘোষণা করেন। যারা উত্তীর্ণ হয় তাদের গ্রিনকার্ড দেওয়া হয়। এর মেয়াদ থাকে এক বছর। আর যারা উত্তীর্ণ হতে পারে না, তাদের দেওয়া হয় রেড কার্ড।

 

চূড়ান্ত ডাক্তারি পরীক্ষা

আইএসএসবি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ডাকা হবে ঢাকা সেনানিবাসের বিএনএস হাজী মহসীনে।

 

চূড়ান্ত মনোনয়ন

চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং নৌ সদর থেকে মনোনীতরা অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেবেন চট্টগ্রামের নেভাল একাডেমিতে।

 

প্রশিক্ষণ ও সুযোগ-সুবিধা

তিন বছরের প্রশিক্ষণ শেষে একজন ক্যাডেটকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে ‘সাব লেফটেন্যান্ট’ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। পাওয়া যাবে সশস্ত্র বাহিনীর বেতনক্রম অনুযায়ী বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। বিদেশে উচ্চতর প্রশিক্ষণ, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যোগদান, বাসস্থান, ডিওএইচএসে প্লট, উন্নত চিকিৎসাসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন একজন নৌ কর্মকর্তা।

 

স্নাতকের পর কমিশন্ড অফিসার

এক্সিকিউটিভ, সাপ্লাই, ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল ও শিক্ষা শাখায় সরাসরি কমিশন্ড অফিসার পদেও নিয়োগ দেবে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। আবেদনের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা ভিন্ন হলেও শারীরিক যোগ্যতা, আবেদন প্রক্রিয়া, পরীক্ষার ধরন, নিয়োগ প্রক্রিয়া অফিসার ক্যাডেটের মতোই।

এই পদে আবেদন করতে হলে প্রতিটি শাখার জন্য এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ ৩.০০/দ্বিতীয় বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতকসহ সিজিপিএ ২.৫০/দ্বিতীয় শ্রেণি পেয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। ১ জুলাই ২০১৫ তারিখে এক্সিকিউটিভ, সাপ্লাই ও ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার জন্য বয়সসীমা ৩০ এবং শিক্ষা শাখার জন্য সর্বোচ্চ ৩৫ বছর। তবে শিক্ষা শাখার (মেডিক্যাল) জন্য বয়সসীমা ২৮।

আবেদনের শেষ তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি। আগামী ৬ থেকে ৯ এপ্রিল বিএন কলেজ ঢাকায় প্রার্থীদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও প্রাথমিক সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হবে। উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ১০ এপ্রিল অংশ নিতে হবে লিখিত পরীক্ষায়।

 

যোগাযোগ

পরিচালক, পার্সোনাল সার্ভিসেস পরিদপ্তর, নৌবাহিনী সদর দপ্তর, বনানী, ঢাকা-১২১৩।

ফোন : ৯৮৩৬১৪১-৯

ওয়েবসাইট : www.joinnavy.mil.bd

– See more at: http://www.kalerkantho.com/feature/chakriache/2015/02/18/189064#sthash.m2T6N8vZ.dpuf