অন্যান্যজেনে নিন

বাবুই পাখি’র আদ্যপান্ত


sisirবাবুই পাখি আমাদের অতি পরিচিত একটি পাখি। বাবুইকে কোনো কোনো অঞ্চলে ‘বাওই’ বলে। এর ইংরেজি নাম ইধুধবিধাবত্, বৈজ্ঞানিক নাম চষড়পবঁং ঢ়যরষরঢ়ঢ়রহঁং। ঢাকা শহর থেকে শুরু করে দেশের সব জায়গায় ওদের দেখতে পাওয়া যায়। প্রধানত তাল, খেজুর ও নারকেল গাছে বাস করলেও আম, জাম, কাঁঠাল, বাবলা, পাকুড় গাছেও এদের বাসা বানাতে দেখা যায়। এমনকি কখনো কখনো বরই গাছ বা গ্রামের ছনের ঘরের চালেও ওদের বাসা দেখতে পাওয়া যায়। তবে যেখানেই ওরা বাসা বানায় না কেন, একসঙ্গে বেশ কয়েকটি বাসা সেখানে থাকবেই। অর্থাত্ এরা দলবদ্ধ সামাজিক পাখি। তাই এ পাখি কলোনি করে থাকে। ওরা খেতে যায় দলবেঁধে।
স্ত্রী-পুরুষ বাবুই দেখতে একই রকম। তবে স্ত্রী বাবুইয়ের বাদামি পিঠে খয়েরি খাড়া দাগ থাকে। আর দেহের নিচে বুকের দিকটা সাদাটে। তাতেও সামান্য লম্বা দাগ দেখা যায়। প্রজনন ঋতুতে ডিম পাড়ার সময় হলে পুরুষ পাখির মাথায় উজ্জ্বল হলুদ রং ধারণ করে এবং সে সময় এদের বুকও হালকা হলুদাভ হয়। পিঠ দেখতে অনেকটা সোনালি আভায় ভরা। ওদের ঠোঁট শক্ত ও আগা সুচালো।baboi-pakhir basha2
বাবুই পাখিদের দাম্পত্য জীবন বেশ মজাদার। প্রজননকালে (মে-সেপ্টেম্বর) পুরুষ বাবুই ধান বা খেজুরের পাতা ঠোঁটে নিয়ে চমত্কারভাবে উড়ে চলে বাসা বাঁধার স্থলে। সেখানে তাল, খেজুর অথবা নারকেলের পাতা ঠোঁট দিয়ে ফুটো করে তাতে গেঁথে দেয় বাসার ভিত। তারপর বাসা তৈরির পালা। বাসার ভিত সন্তোষজনক বলে মনে না হলে স্ত্রী বাবুই পুরুষ বাবুইকে সঙ্গী হিসেবে মেনে নেয় না। বরং খুঁজতে থাকে অন্য পুরুষ বাবুইকে।baboi-pakhir basha
বাসা নির্মাণ শেষ হলে তাতে স্ত্রী বাবুই ২-৪টি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো দেখতে দুধসাদা। স্ত্রী যখন ডিমে তা দিতে বসে তখন পুরুষ পাখি তাকে ছেড়ে কাছের কোনো ডালের পাতায় অন্য স্ত্রী পাখির জন্য নতুন করে বাসা নির্মাণ করে। এভাবে এক ঋতুতে একটি বাবুই পাখি ৩ থেকে ৪ স্ত্রী বাবুইয়ের সঙ্গে সংসার করে; বাসা বানায়। ঝুলন্ত বাবুইয়ের বাসা ঠাসা বুননে চমত্কার। তাতে একাধিক কোঠার মতো থাকে। এর একটিতে ডিম পাড়ার জন্য বাটির মতো আধার তৈরি করে রাখে পুরুষ বাবুই। স্ত্রী সেখানে ডিম পাড়ে, তা দেয়, বাচ্চা ফুটায়। বাচ্চার যত্নআত্তিও স্ত্রী একাই করে। বাবুই পাখি বাচ্চাদের খুব আদর করে। শস্যদানা, ধান বা গম এদের প্রধান খাবার হলেও এরা প্রজনন ঋতুতে পোকামাকড় ও কীটপতঙ্গ খেয়ে থাকে।