ক্যারিয়ার

বিসিএস প্রস্তুতি: অনুমানে উত্তর না করাই উত্তম


৩৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সময় পরিবর্তন করা হয়েছে। আগামী ৬ মার্চ সকাল সাড়ে ৯টার পরিবর্তে ওই দিন বিকাল ৩টায় সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রসমূহে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কেবল ভালো প্রস্তুতি থাকলেই চলে না! সব হিসাব-নিকাষ পাল্টে যেতে পারে পরীক্ষার দুই ঘণ্টায়। পিন্টু রঞ্জন অর্ককে ভালো করার কৌশল শুনিয়েছেন ৩৩তম বিসিএসে সম্মিলিত মেধাতালিকায় প্রথম রিদওয়ান ইসলাম
রিদওয়ান ইসলাম। ছবি : নাভিদ ইশতিয়াক তরু
 

আমার মনে হয়, বিসিএসে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার বৈতরণী পার হওয়াটাই সবচেয়ে কঠিন। কারণ এই পরীক্ষায়ই বাদ পড়েন সবচেয়ে বেশি প্রার্থী। তুমুল প্রতিযোগিতামূলক এ চাকরিযুদ্ধে উতরে যেতে ভালো প্রস্তুতি যেমন থাকা চাই, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার দুই ঘণ্টা সময়। আমাদের সময়ে বাছাই পরীক্ষা হতো এক ঘণ্টার। এবারই প্রথম দুই ঘণ্টার পরীক্ষা হবে। যাঁরা মাথা ঠাণ্ডা রেখে এই দুই ঘণ্টা পার করতে পারবেন, বিসিএসের প্রথম ধাপ তাঁরাই অতিক্রম করতে পারবেন। পরীক্ষার আগের রাতে পরীক্ষাকেন্দ্রের নিকটবর্তী কোনো স্থানে থাকার চেষ্টা করুন। রাত জাগবেন না। হয়তো দেখা গেল, পরদিন সকালে পরীক্ষা, এই টেনশনে ঘুম আসছে না। আমি বলব, টেনশন করলে আদতে আপনারই ক্ষতি। পরীক্ষাকে যত সহজভাবে নিতে পারেন ততই ভালো। সম্ভব হলে এ সময় নিজের মুঠোফোন বন্ধ রাখুন। কারণ প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগের রাত অনেকটাই গুজবের রাতে পরিণত হয়। প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে, ফটোকপি পাওয়া যাচ্ছে-এ ধরনের গুজব বাতাসে ভাসতে পারে। বন্ধুবান্ধবসহ পরিচিতজনরা ফোন করতে পারেন। আমার বেলায়ও এমনটি ঘটেছিল। কোনো প্রকার গুজবে কান দেবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। দেখা গেল, গুজবের পেছনে ছুটতে গিয়ে সারা রাত নির্ঘুম কাটালেন। আর এই না ঘুমানোই পরীক্ষা হলে আপনার জন্য ডেকে আনতে পারে বিপর্যয়।

কোন বিষয়ের উত্তর আগে করবেন, কোনটির জন্য কত সময় বরাদ্দ রাখবেন-এসব বিষয়ে আগে থেকেই পরিকল্পনা করে নেওয়া ভালো। কারণ ভালো প্রস্তুতি সত্ত্বেও অনেককেই পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে আফসোস করতে দেখেছি। কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। মনে রাখবেন, প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটা ভুল উত্তরের জন্য ০.৫ নম্বর কাটা যাবে। অনুমানে কোনো প্রশ্নের উত্তর না করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ এ ক্ষেত্রে ভুল হওয়ার আশঙ্কাই বেশি থাকে। কোনো প্রশ্নের উত্তরের ব্যাপারে সন্দিহান হলে তা বাদ দিয়ে পরের প্রশ্নে চলে যান। তা নিয়ে চিন্তা করতে গেলে দেখবেন আপনার মূল্যবান কয়েকটি মিনিট পার হয়ে গেছে! অনেকে এ কারণে পুরো প্রশ্নপত্র পড়ে দেখারও সময় পান না। পরীক্ষা দিতে গিয়ে উপলব্ধি হয়েছে, সন্দেহযুক্ত প্রশ্নের ক্ষেত্রেই বেশি সময় নষ্ট হয়। পরীক্ষা ২০০ নম্বরের। ধরুন, ১২০টি প্রশ্নের উত্তরের ব্যাপারে আপনি নিশ্চিত। তাহলে কেবল জানা প্রশ্নগুলোর উত্তর করুন। সন্দেহযুক্ত অবশিষ্ট ৮০টিরও যদি উত্তর করেন, তাহলে হয়তো ২০-২৫টি সঠিক হলেও হতে পারে। অবশিষ্ট ৫৫-৬০টি ভুল হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। তাহলে আপনার যোগ হবে ২০ বা ২৫ নম্বর। অবশিষ্ট ৫৫ বা ৬০টি ভুল উত্তরের জন্য বিয়োগ হবে সাড়ে ২২ থেকে ৩০ নম্বর। দেখা গেল, সন্দেহযুক্ত প্রশ্নগুলো উত্তর না করলে যা পেতেন, উত্তর করলে তার চেয়ে নম্বর কম পাচ্ছেন। এর মানে, আপনি কয়েক হাজার পরীক্ষার্থীর পেছনে পড়ে গেলেন!

গণিতে ভালো হলে গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা অংশের উত্তর আগে করুন। গণিতে কিছুটা দুর্বল হলে বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান ও বিজ্ঞান, ভূগোল ও পরিবেশ, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসনের মধ্যে যেগুলো নিশ্চিত পারেন সেগুলোর উত্তর করুন। সব শেষে গণিত অংশের উত্তর করুন। উত্তর না করা প্রশ্নগুলো টিক, ক্রস বা পছন্দমতো বিশেষ কোনো চিহ্ন দিয়ে মার্ক করতে পারেন।

কিছু প্রশ্ন আছে, যেগুলোতে চারটি অপশনের মধ্যে সহজেই দুটি ভুল অপশন বের করা যায়। বাকি দুটির মধ্যে কোনটি সঠিক তা নিয়ে একটু ভাবুন। সঠিক উত্তর বের করতে পারলে বৃৃত্ত ভরাট করুন। আর একেবারে সঠিক মনে না হলে উত্তর করবেন না। উত্তরপত্র পরীক্ষা করা হবে যন্ত্র দিয়ে। উত্তর ও প্রয়োজনীয় তথ্যের ঘর ভরাট ছাড়া উত্তরপত্রে কোনো রকম দাগ দেওয়া যাবে না। এটাকে ভাঁজ করা যাবে না, মোচড়ানো যাবে না, কোনা ভাঙা যাবে না এবং ছেঁড়া বা অন্য কোনোভাবে বিকৃত করা যাবে না। চাকরিপ্রার্থীসংখ্যা অনেক বেশি দেখে ভয় পাবেন না। কারণ সংখ্যা যত বেশিই হোক না কেন, চাকরির বাজারটা এখনো কঠোর অনুশীলনকারীদের জন্য অনেকটাই ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার মতোই! বিশ্বাস রাখুন, আপনিই সফল হবেন।

– কালের কণ্ঠ অবলম্বনে