বিনোদন

ব্যারিস্টার থেকে চিত্রনায়িকা


masid rono1ঈশিকা খান। নাটকে নানা মাত্রিক অভিনয় আর ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে ভক্তদের কাছে তাঁর রয়েছে আলাদা পরিচিতি। আবার বিজ্ঞাপনও তাঁর বেশ সমৃদ্ধ। ঈশিকার অজানা গল্প শোনাচ্ছেনমাসিদ রণ। ছবি তুলেছেন শামছুল হক রিপন 

লেখাপড়া যেমন-তেমন, স্কুল-কলেজের অনুষ্ঠান এলেই মায়ের মাথা খারাপ করে দিতেন কস্টিউম কিনে দেওয়ার জন্য। আর একটু বড় হতেই খুঁজছিলেন অভিনয়ের সুযোগ। কিন্তু সুযোগ পাওয়া যেন সোনার হরিণের সন্ধান! ঈশিকা খানকে অনেক ধৈর্য ধারণ করতে হয়েছে। অবশেষে মেওয়া ফলল ঠিকই, কিন্তু মনের মতো না। নিজের বয়সের তুলনায় অনেক বেশি বয়সী চরিত্রে অভিনয় করতে হলো। কিন্তু তিনি ভালো করেই জানতেন, এমন একটি ভালো নাটকে চরিত্রটি যদি ফুটিয়ে তোলা যায় তবে তাঁর অভিনয়ের বাসনা অন্তত পূর্ণ হবে। মোটামুটি সাড়া ফেলেন ঈশিকা।eshika

তবে খুঁজছিলেন এমন সুযোগ, যেখানে নিজের সেরাটা প্রমাণ করবেন। ফটোসেশন করে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী সংস্থায় ছবি জমা দিলেন। একদিন অমিতাভ রেজার কাছ থেকে ফোন পেয়ে পড়িমরি করে হাজির হলেন শুটিং স্পটে। কিন্তু আশাভঙ্গ হলো, যখন জানলেন রবির টিভিসিটিতে তাঁর উপস্থিতি চোখের পলকে মিলিয়ে যাবে—এমন। অর্থাৎ পর্দায় তাঁকে চোখে পড়বে দর্শকদের, কিন্তু ঠিক চেনা যাবে না। কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলিয়ে ফেলার অবস্থা। দেখে অমিতাভ রেজার সহকারী আইরিন ওই টিভিসির পাসিং ক্যারেক্টার থেকে বাদ দিয়ে দেন ঈশিকাকে।ishika

আর বলেন, ‘তোমাকে শিগগিরই ভালো কাজের জন্য ডাকব।’ ঠিক তাই হলো, তিন দিন পর ডাক পেলেন। রবিরই আরেকটি টিভিসিতে তাঁকে প্রধান মডেল হিসেবে সুযোগ দেওয়া হলো। ঈশিকা বলেন, ‘এটা ছিল ২০১২ সালের শেষের দিককার কথা। ১৮ বছর বয়সের আগে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া যাবে না—এমন একটি ম্যাসেজ নিয়ে করা রবির টিভিসি। সেখানে আমি ছিলাম একজন ব্যারিস্টার। আমিই সবার মাঝে এই ম্যাসেজটি পৌঁছে দিই।’ মাঝখানে বাবা অসুস্থ হয়ে চলে গেলেন না-ফেরার দেশে। ঈশিকা মিডিয়া থেকে দূরে ছিলেন প্রায় এক বছর। আবার ফেরেন ২০১৪ সালে। আর এই প্রত্যাবর্তনই ভাগ্য ফেরায়। তিনি আবারও সুযোগ পান রবির একটি বড় বাজেটের টিভিসিতে। আদনান আল রাজীবের নির্দেশনায় এটি ছিল রবি ঈদ অফারের। এতে ঈশিকা একজন গার্মেন্টস শ্রমিক। স্বামী-সন্তান নিয়ে ঈদের আগের দিন ট্রেনে চড়ে বাড়ি ফেরার জন্য কমলাপুর রেল স্টেশনে যান। কিন্তু হঠাৎ তাঁর খেয়াল হয়, ভিড়ের মধ্যে হাত থেকে ছুটে গেছে একমাত্র ছোট্ট মেয়েটি। দিশাহারা হয়ে পড়েন। একে-ওকে জিজ্ঞেস করতে থাকেন মেয়েকে দেখেছে কি না? আর অনবরত মেয়ের উচ্চতা, বয়স, গায়ের রং, পোশাকের রং বলতে থাকেন ঈশিকা। এই টিভিসি করে নিজেকে পুরোদমে প্রমাণ করেন তিনি। এ পর্যন্ত করেছেন ২০ টি টিভিসি। তার মধ্যে এই কাজটি তাঁর নিজের সবচেয়ে প্রিয়। টিভিসির অনেক স্মৃতি মনের মধ্যে দোলা দেয়। ‘প্রথম শট ছিল কমলাপুরের ভিড়ে মেয়ে হারিয়ে যাওয়ার পর আমি আঁতকে উঠব। প্রথম শটটাই এত ভালো হয়েছিল যে ইউনিটের সবাই দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়েছিল। এমনকি পুরো টিভিসিতে আমার অ্যাকটিং দেখে এডিটিং প্যানেলের দু-একজনের চোখ ভিজে উঠতেও নাকি দেখা গেছে। এটাই আমার কাজের অনুপ্রেরণা। তখন থেকেই মনে হতে লাগল, আমিও দর্শককে অভিনয় দিয়ে হাসাতে পারি-কাঁদাতে পারি।’—বললেন ঈশিকা। পারদর্শিতার পাশাপাশি আছে তাঁর সীমাবদ্ধতাও। আরএফএল পাম্পের টিভিসির  শুটিং হয়েছিল ২০১৫ সালের মাঝামাঝিতে। তাঁর বিপরীতে ছিলেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস। বানিয়েছিলেন মাসুদ জাকারিয়া সাবিন। দৃশ্যায়ন হয়েছিল গাজীপুরের একটি রিসোর্টে, একেবারে ফিল্মি কায়দায়। গল্পটা ছিল বাংলা ছবির অ্যাকশন দৃশ্যের। এই বিজ্ঞাপনে ঈশিকা বাংলা কমার্সিয়াল ছবির টিপিকাল নায়িকা। তাঁকে ভিলেন অ্যাটাক করে, নায়ক বাঁচায়, অতঃপর নায়কের সঙ্গে নাচানাচি। আর মাঝে মাঝে উঃ-আঃ—বাংলা ছবির এমন সব পরিচিত শব্দ করতে হয় তাঁকে। কিন্তু কিছুতেই পারছিলেন না। ঈশিকা বলেন, ‘আসলে এসব আমার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে একদমই যায় না। তাই হচ্ছিল না। চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন পরিচালকও। কিন্তু ফেরদৌস ভাইয়ের মতো বড় মাপের একজন তারকা আমাকে সে যাত্রায় বাঁচিয়ে দিলেন। তিনি ধরে ধরে মুখের এক্সপ্রেশন, বডি ল্যাঙ্গুয়েজসহ অনেক কিছু শিখিয়ে দিলেন। এগুলো দেখে ইউনিটের সবার সে কি হাসাহাসি! তবে করতে গিয়েই বুঝেছি, কমার্সিয়াল ফিল্ম নয়। করলে আর্ট ফিল্ম করব।’ বর্তমানে ঈশিকা অভিনীত প্রোভিটা ফিড, আরএফএল ফার্নিচার ও সার্ফএক্সেল টিভিসি প্রচারিত হচ্ছে। এ ছাড়া তিনি করেছেন আরএফএলের বিভিন্ন পণ্যের প্রায় হাফ ডজন টিভিসি। এর বাইরে রয়েছে গ্রামীণফোন, প্রাণ ফ্রুটো, অকটেন মোবাইল, প্রাণ কাসুন্দি ইত্যাদি টিভিসি।