বিনোদন

সারাদেশ জুড়ে জোভান


masid rono1জোভান এ সময়ের তরুন তারকাদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয়। এবার ভালোবাস দিবস উপলকক্ষে নির্মিত ক্লোজআপ কাছে আসার সাহসী গল্পে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে আবারো এসেছেন আলোচনায়। তবে তাঁর তারকা হওয়ার পেছনে রয়েছে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য টিভিসি। অন্তরালে পড়ে থাকা সেই গল্প শোনাচ্ছেন মাসিদ রণ। ছবি তুলেছেন শামছুল হক রিপন।

পরিবারের কেউ মিডিয়াতে কাজ করাতো দূরের কথা, মিডিয়া নিয়ে ভেবেছে কি-না তাঁও জানা নেই জোভানের। কিন্তু বড় হতে হতে তাঁর মধ্যে কিভাবে যেন নায়ক হওয়ার স্বপ্ন জাগে। এমন নয় যে সেই নায়ককে দেখলে সবাই ভিড় করবে বা অটোগ্রাফ নেবে। শুধু মানুষ যাতে তাঁকে বলে ছেলেটা ভালো অভিনয় করে। এই স্বপ্নটুকু বাস্তবে রূপ দিতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে আজকের জনপ্রিয় এই মডেল-অভিনেতাকে। যেহেতু মিডিয়াতে আপন কেউ ছিলেন না, তাই প্রথমে কোন কূল-কিনারা পাচ্ছিলেন না। তাছাড়া এমনও নয় যে ছোটবেলা থেকে অভিনয়ের চর্চা রয়েছে বা দেখতে হলিউডের হিরোদের মতো। তাই অনেকটা অকূল সমূদ্রেই তরী ভাসাতে হয় তাঁকে। অল্প পরিচিত একজনের ডাকে বিজ্ঞাপন নির্মাতা নাফিজের অফিসে আসেন অডিশন দিতে। বুকে অনেক স্বপ্ন বাসা বাধে, এই বুঝি কপাল খুলল! কিন্তু স্বপ্ন পূরনের আনন্দের চেয়ে স্বপ্ন ভাঙনের হাহাকারই তাঁকে শুনতে হয়েছে বেশি। প্রানের একটি পণ্যের সেই বিজ্ঞাপনে জোভান ছিলেন ৪০-৫০ জন ছেলেমেয়ের ভিড়ে একজন। শুধু কি তাই-২০১১ থেকে ২০১৩ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় ২ ডজন টিভিসির জন্য অডিশন দেন তিনি, কিন্তু প্রতিবারই আশাহত হতে হয়েছে। ২০টির মতো টিভিসিতে তিনি ভিড়ের মধ্যেই হারিয়ে যাওয়ার ভূমিকায় ছিলেন। কথাগুলো অনেকটা অকাতরে বলে গেলেন জোভান। তিনি সেই কষ্টের দিনগুলো থেকে একটু একটু করে শিখেছেন কিভাবে নিজেকে মেধাকে শূণ্যস্তর থেকে যোগের খাতায় নিয়ে আাস যায়। চেয়েছিলেন একটি বড় বাজেটের বিজ্ঞাপনে দুর্দান্ত পারফর্ম করে সবাই তাঁক লাগিয়ে দিতে। কিন্তু ভাগ্যদেবী প্রসন্ন হচ্ছিলেন না কিছুতেই। অবশেষে সুযোগ পান আতিক হাসানের পরিচালনায় ‘ইউনিভার্সিটি’ নামের একটি দীর্ঘ ধারাবাহিকে। সেটাও অনেকটা নাটক-সিনেমার গল্পের মতো করে। jovan

প্রতিবার অডিশনে নিরাশ হতে হতে এইবার খবর পেয়েও আসতে চাচ্ছিলেন না জোভান। বন্ধু সিয়াম তাঁকে জোর করে নিয়ে গেলেন। অডিশন দিলেন অসংখ্য ছেলেমেয়ের সঙ্গে। প্রথম দিনে সিয়ামকে সিলেক্ট করা হলেও জোভানকে ফিরতে হয় রিক্ত হাতে। কিন্তু কয়েকদিন পর আবারো ডাক আসে তাঁর, এবং প্রথমবারের মতো উল্লেখযোগ্য কোন কাজে সুযোগ পান জোভান। ৮ মাস চলেছিল ধারাবাহিকটি। ততদিনে অভিনয়টা একটু একটু করে রপ্ত করতে লাগলেন তিনি। আর এই নাটকে তাঁর অভিনয় দেখেই কিচলু হায়দার জোভানকে সুযোগ দেন রবির টিভিসিতে। সেটা ২০১৩ সালের শেষের দিকে। এই কাজটি মোটামুটি সাড়া ফেললে এক এক করে ভালো কাজের প্রস্তাব পেতে শুরু করেন তিনি। এরপর করেন আশফাক বিপুলের নির্দেশনায় জাস্ট জেলির টিভিসি। এখানে প্রেমিকা শাহতাজকে পটাতে অনেক পদ্ধতি প্রযোগ করেও সফল না হওয়া ছেলেটি জাস্ট জেলির গুনে প্রেমিকার মন পান। ইয়ং জেনারেশনের কাছে তরুন এই দুই মডেলের রসায়ন বেশ পছন্দ হয়। আর তাঁর ফলশ্রুতিতেই তরুন প্রজন্মের নতুন রোগ সেলফি নিয়ে তৈরি  বিজ্ঞাপনেও সুযোগ পান তিনি। এটি ছিল বাংলালিংকের ‘আমি সারা বাংলাদেশ জুড়ে’ বিজ্ঞাপনটি। নির্দেশক পিপলু আর খান এই টিভিসিতে জোভানকে নেওয়ার জন্য ক্লায়েন্টের সঙ্গে রীতিমতো যুদ্ধ করেন। অবশেষে বিপুল দর্শক সাড়া পায় কাজটি। ‘এরপর থেকে আর আমাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একটার পর একটা ভালো কাজের প্রস্তাব পাচ্ছি। আমার এই জায়গাটা তৈরি করতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। প্রথমে পরিবারের সাপোর্টও পাইনি। এখন তাঁরাও বেশ খুশি। আমি এই জায়গাটার মূল্য বুঝি। তাই নিজেকে আজীবন মিডিয়ার ভালো কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখতে চাই’- বললেন জোভান।jovan5

বাংলালিংকের এই টিভিসি সকলের খুব পছন্দ হলেও জোভানের নিজের কাছে বেশি ভালোলাগে গাজী টিভির বিজ্ঞাপনটি। এখানেও তাঁর শহশিল্পী শাহতাজ। কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় এই টিভিসিতে একটি তরুন প্রেমিক যুগলের মিষ্টি একটি মুহূর্ত দেখানো হয়। ‘শাহতাজ আকাশের দিকে তাকিয়ে আমাকে বলে, ‘আমি যা দেখি তা কি তুমি দেখ?’ ও উড়ন্ত পাখির দলকে চেইনসহ লকেট আকারে ভাবে, অর্থাৎ আমার কাছে তাঁর অভিমানভরা আবদার, যেন একটা লকেট উপহার দেই। কিন্তু ওই একই আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রেমিক দেখে মেঘের ভাজে তাঁর প্রেমিকার মুখ। খুবই অল্প সময়ে অনেক আবেগীয় একটা মুহূর্ত তুলে ধরেছেন নির্দেশক। দর্শকও অনেকটা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন টিভিসিটি দেখে। এটা জানতে পেরে টিভিসিটি আমার অনেক ভালোলাগতে শুরু করে’ জানালেন জোভান।jovan3

তবে এই ভালো কাজগুলো দর্শকের সামনে আনতে অনেক কষ্ট করতে হয় শিল্পীদের। তেমনি ঘটেছে জোভানের বেলায়ও। বাংলালিংকের ওই সেলফি টিভিসি করতে তাঁকে টানা ১৭ দিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জার্নি করতে হয়েছে। টিভিসিতে যেসব এলাকার নাম বলা হয় প্রতিটি এলাকায় গিয়ে গিয়ে কাজ করতে হয়েছে। দেখা যাচ্ছে ভোর চারটের সময় পাহাড়ের দীর্ঘপথ বেয়ে একটা মাত্র সেলফির শট নেওয়া হয়েছে। আবার একটি সেলফির শটের জন্য পুরো শরীর কাঁদার মধ্যে চুবাতেও হয়েছে। কিন্তু সব কষ্টের ফল যখন মানুষের এতো ভালোবাসা তা আর কষ্ট বলে মনে হয় না। এই ভালোবাসা পাবার জণ্যই নিয়মিত কাজ করে যেতে চান জোভান। তাঁর আরো কয়েকটি উল্লেখযোগ্য টিভিসির মধ্যে রয়েছে এলজি এলইডি টিভি, সেভেন আপ, প্রান ঝাল মুড়ি, রিং চিপস, কুড়কুড়ে ইত্যাদি।