সাহিত্য

বই মেলায় ওবায়েদুল্লাহ মামুনের দুই বই


ভাষা আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস নিয়ে আলোকচিত্রী, ও লেখক ওবায়েদুল্লাহ মামুনের নতুন দুটি বই এসেছে অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। প্রথমটি সম্পাদনা-‘একুশের কথা একুশের চেতনা’ ও দ্বিতীয়টি-‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬। যা ভাষা আন্দোলন গবেষক ও ভাষা মিউজিয়ামের নির্বাহী পরিচালক এম আর মাহবুবের সঙ্গে যৌথভাবে লিখেছেন লেখক।12722050_1701718463439201_1973016300_n

`একুশের কথা একুশের চেতনা’:

ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদান রেখেছেন, আন্দোলন গড়ে তুলেছেন, পরিচালনা করেছেন এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ সক্রিয় থেকেছেন এমন ২১ জন ভাষাসৈনিকের ২১টি প্রবন্ধকে এক মলাটে নিয়ে আন্তর্জাতিক আলোকচিত্রণ শিল্পী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও লেখক ওবায়েদুল্লাহ মামুনের সম্পাদনায় ‘একুশের কথা একুশের চেতনা’এখন অমর একুশে গ্রন্থমেলায়।

ভাষাসৈনিক আহমদ রফিকের ভূমিকায় কবি ও সাংবাদিক মাহতাব শফির চমৎকার প্রচ্ছদে ২২৪ পৃষ্ঠার এ বইটির মূল্য ৪৫০ টাকা।

বইটিতে স্থান পেয়েছে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সরদার ফজলুল করিম, তাজউদ্দিন আহমদ, আব্দুল মতিন, মুস্তাফা নূরউল ইসলাম, কাজী গোলাম মাহবুব, গাজীউল হক, এম আর আখতার মুকুল, আহমদ রফিক, মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, অ্যাডভোকেট আব্দুস সামাদ, ড. আলাউদ্দিন আল আজাদ, হাসান হাফিজুর রহমান, ড. সুফিয়া আহম্মদ, ড. রফিকুল ইসলাম, কামাল লোহানী, আবদুল গাফফার চৌধুরী ও ড. আনিসুজ্জামানের মতো শীর্ষ ভাষাসৈনিকের লেখা প্রবন্ধ।

ভাষা গবেষকদের মতে, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের অনেক অজানা কথা ও ইতিহাস উঠে এসেছে ‘একুশের কথা একুশের চেতনা’গ্রন্থটিতে।

বইটির সম্পাদক ওবায়েদুল্লাহ মামুন জানান, ‘একুশের কথা একুশের চেতনা’ গ্রন্থটি মাত্র ২১ জন ভাষাসৈনিকের লেখা নিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ২১ জনকে নির্বাচন করতে গিয়ে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে যারা ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদান রেখেছেন, আন্দোলন গড়ে তুলেছেন, পরিচালনা করেছেন এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে সক্রিয় থেকেছেন। সকল গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে অর্থাৎ একুশের চেতনা থেকে সরে আসেননি। এ চেতনা লালন করেছেন জীবনের শেষ অবধি।’

তিনি জানান, নিঃসন্দেহে ভাষা আন্দোলন ২১ জন ভাষাসৈনিকে সীমাবদ্ধ নয়। এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি।

পরবর্তী সম্পাদনায় বাকি অনেকের লেখা নিয়ে আরও প্রকাশনার আশা রাখেন তিনি।

তিনি আরও জানান, ‘একুশের কথা একুশের চেতনা’সংকলনটিতে ২১ জন ভাষাসৈনিককে জন্ম অনুযায়ী ক্রম করা হয়েছে। যদিও ভাষা সংগ্রামী সবাই সমান গুরুত্ববহ।’

বইটি নিয়ে ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক বলেন, ‘অমর একুশে আজ শুধু একটি তারিখ বা সংখ্যা নয়। আমাদের চেতনা আর অস্তিত্বের প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত। একুশের চিরন্তনী আবেদন ও তাৎপর্যকে সম্মান জানিয়ে একুশে চেতনা পরিষদ, যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বায়ক, সংগঠক ও গবেষক ওবায়েদুল্লাহ মামুন সম্পাদনা করেছেন একুশের কথা একুশের চেতনা গ্রন্থটি। গ্রন্থটিতে মহান ভাষানৈনিকদের লেখা ও স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়ে এক নজরে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের প্রকৃত চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। ২১ জন ভাষাসৈনিকের জীবনী গ্রন্থটিকে তাৎপর্যময় করে তুলেছে। গ্রন্থটি রাষ্ট্রাভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে নিঃসন্দেহে।’11668138_1701718480105866_2030047230_n

`রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬’:

ভাষা আন্দোলনের বৃহৎ একটি সময়ের ইতিহাস জানাতে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এসেছে ওবায়েদুল্লাহ মামুন ও এম আর মাহবুবের লেখা ‘ভাষা আন্দোলন ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬’ গ্রন্থটি।

বইটি যৌথভাবে প্রকাশ করেছে বনসাই প্রকাশনী ও লিপি প্রকাশন। গ্রন্থমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে নালন্দা’র স্টলে (৪৩৭-৪৪০) বইটি পাওয়া যাচ্ছে।

কবি ও সাংবাদিক মাহতাব শফির চমৎকার প্রচ্ছদে ৮০ পৃষ্ঠার বইটির মূল্য ২০০ টাকা।

বইটি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক আলোকচিত্রণ শিল্পী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও লেখক ওবায়েদুল্লাহ মামুন জানান, ‘ভাষা আন্দোলনের সূচনা অর্থাৎ বায়ান্ন পূর্ববর্তী ইতিহাস অনেকের অজানা। তেমনি বায়ান্ন পরবর্তী সময়ে এ আন্দোলন কোন দিকে গড়িয়েছে এটাও জানেন না অনেকে। তাই ১৯৪৬ থেকে ১৯৫৬ সালের মধ্যকার ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস একটি গ্রন্থে নিয়ে আসার প্রয়াসে ‘ভাষা আন্দোলন ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬’ বইটি রচনা।’

বইটি রচনার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে লেখক ওবায়েদুল্লাহ মামুন বলেন, ‘একুশে চেতনা পরিষদ, যুক্তরাষ্ট্র, ২০১৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কে এক সেমিনার আয়োজন করে। যার বিষয় হিসেবে নির্ধারণ করা হয় ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ১৯৪৭-১৯৫৬’। জানামতে এটি উত্তর আমেরিকায় ভাষা নিয়ে প্রথম সেমিনার। পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবে যখন অধিকাংশ আলোচককে এ বিষয়ে কথা বলার প্রস্তুতি নিতে বলি, তখন নতুন এক সমস্যা দেখা দেয়। প্রবাসে বায়ান্নর পূর্ববর্তী সময়ে ভাষা অন্দোলন নিয়ে খুব কম মানুষই জানেন। দূরদেশ বিধায় এমন বিড়ম্বনা ভেবে দেশে ভাষা আন্দোলনের বিশিষ্ট গবেষক ও ভাষা মিউজিয়ামের নির্বাহী পরিচালক বন্ধুবৎসল এম আর মাহবুবের শরণাপন্ন হই। তিনি বাংলাদেশেও বায়ান্ন পূর্ববর্তী ওই সময়টার তথ্যের দুষ্প্রাপ্যের কথা জানান এবং এ বিষয়ে যারপরনাই নিজেদের কিছু একটা করার তাগিদ দেন। এ থেকেই এ বইটি লেখার অনুপ্রেরণা। পরবর্তীতে এ বিষয়ক নানা দলিল সংগ্রহ ও পাঠ করি। যা লেখার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে।’

বইটির লেখক বিশিষ্ট ভাষা গবেষক ও ভাষা মিউজিয়ামের নির্বাহী পরিচালক এম আর মাহবুব বলেন, ‘এ বইটি ভাষা আন্দোলন পূর্ববর্তী সময় সম্পর্কে নতুন প্রজন্ম, এমনকি প্রবীণ প্রজন্মকেও জ্ঞাত করবে- এমন বিশ্বাস রাখি।’

সময় পরিক্রমায় এমন প্রকাশনা আরও চলবে এমনটা আশা করেন দুই লেখক। বই দুটি যৌথভাবে প্রকাশ করেছে বনসাই প্রকাশনী ও লিপি প্রকাশন। পাওয়া যাচ্ছে গ্রন্থমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে নালন্দা’র স্টলে (৪৩৭-৪৪০)।