বিনোদন

আংটিটা পুরনো হলেও, ভালোবাসা কিন্তু আগের মতোই আছে


masid rono1

আজমেরী আশা। এ প্রজন্মের যে ক’জন তারকা শুধু বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তারকা হয়ে উঠেছেন তাঁদের মধ্যে আশা অন্যতম। মূলত একটি টিভিসি তাঁর ক্যারিয়ারকে নিয়ে গেছে অনেক দূর। ‘ক্লোজ আপ কাছে আসার গল্প’ বিজ্ঞাপনের এই মডেলকে নিয়ে লিখেছেন মাসিদ রণ; ছবি তুলেছেন শামছুল হক রিপন

একটি বিশেষ দিবসের জন্য তৈরি বিজ্ঞাপন, অথচ সেই দিবসটি কাছে এলেই তা টিভি পর্দায় দেখা যাচ্ছে টানা চার বছর ধরে। এ থেকেই বোঝা যায়, বিজ্ঞাপনটির জনপ্রিয়তা কতখানি। আর তাতে প্রধান মডেল যে মেয়েটি, তিনিও মানুষের কতটা প্রিয় হয়ে উঠেছেন, তা সহজে অনুমান করা যায়। হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন। ‘ক্লোজ আপ কাছে আসার গল্প’ টিভিসিতে একজন প্রেমিকা হয়ে সবার নজর কাড়েন ভিট তারকা আজমেরী আশা। যে বিজ্ঞাপন নিয়ে এত কথা, তার গল্পটিও নিশ্চয়ই সবার মনে আছে। ‘দুটি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়ের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক, যেখানে কৃত্রিমতার কোনো স্থান নেই। তাই বেকার ছেলেটা নিজের ভালোবাসার উপহার হিসেবে মেয়েটিকে দেয় একটি ঘাসফুলের আংটি। মেয়েটির মধ্যে ছেলেটির প্রতি ভালোবাসার কোনো কমতি নেই তবুও প্রেমিকের দেওয়া ওই ঘাসফুলের আংটি সে গ্রহণ করে না। তবে এটা কোনো অভিযোগ বা অনুযোগে নয়, এক ধরনের সংশয় থেকে মেয়েটি আংটিটি ফেরত দেয়। কারণ, ছেলেটি কিছুদিনের মধ্যেই চলে যাবে বিদেশ। সেখানে উচ্চশিক্ষার জন্য তাঁকে থাকতে হবে কয়েক বছর, যে সময়টায় মেয়েটা চাইলেই তাঁর প্রিয়কে সশরীরে দেখতে পাবে না, হাত ধরে খোলা মাঠে হাঁটতে পারবে না। তাই মেয়েটি বলে, ‘ফিরে এসে আংটি দিও, তখন নেব’।asa

ছেলেটি সব রকম যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় মেয়েটির সঙ্গে। মেয়েটি ভালোবাসা হারানোর বেদনায় একাকী, অন্ধকারে চোখের জলে বুক ভাসায়। শুধু কি নিজের মানসিক চাপ? মধ্যবিত্ত পরিবার বলে কথা। মেয়ে বড় হয়েছে, তাঁকে বিয়ে দিয়ে থিতু করার দায়িত্ব যে বাবা-মার কাঁধে যমের মতো চেপে  আছে। ছেলেপক্ষ দেখতে আসে মেয়েটিকে। মেয়েটি তাঁর ভালোবাসার জোরে তা না করে দেয়। এদিকে মেয়েটির ছোট বোনকেও বিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না বড় বোনের বিয়ে হচ্ছে না বলে। এভাবে চাপের মুখে দীর্ঘ সাত বছর কেটে যায় মেয়েটির চোখের জলে। হঠাত্ই একদিন মেয়েটির দরজার কলিং বেল বেজে ওঠে। সেই দরজা খোলে, কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না। তবে দরজার নিচে দেখতে পায় একটা জুয়েলারি বক্স। ওটা খুলেই মেয়েটি নস্টালজিক হয়ে পড়ে। সে দেখতে পায় সাত বছর আগের সেই ঘাসফুলের আংটি। মেয়েটি দৌড়ে যায় সামনের পথে। দেখা মেলে অনেক কাঙ্ক্ষিত মানুষটির। ছেলেটিও তখন যোগাযোগ বন্ধের অপরাধে মাথা উঁচু করে তাকাতে পারছে না। কিন্তু সাত বছরের নীরবতা ভাঙাটাও জরুরি। ওটা ভাঙে দুজনের চোখের জলে। পরে ছেলেটিই বলে, ‘আংটিটা পুরনো হলেও, ভালোবাসা কিন্তু আগের মতোই আছে।’ ‘ক্লোজ আপ কাছে আসার গল্প’র সেই সাড়া জাগানো বিজ্ঞাপনচিত্রটির গল্প এটি। আর এই সুন্দর গল্পের জন্যই আজমেরী আশাকে মনে রেখেছেন দর্শকরা। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে টেলিভিশন নাটক বানানোর জন্য দর্শকের কাছে গল্প চাওয়ার কাজটি এই বিজ্ঞাপন দিয়ে এবারও সারছে কর্তৃপক্ষ। প্রতিবছরই সমান গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে টিভিসিটি। সঙ্গে আশাও ভাসছেন শুভেচ্ছা আর অভিনন্দনের জোয়ারে। বিজ্ঞাপনটিতে যুক্ত হওয়ার গল্পটা শোনালেন আশা, ‘আমি ২০১২ সালে ভিট চ্যানেল আই টপ মডেলের দ্বিতীয় সিজনে প্রথম রানার আপ হই। এরপর ভালো কোনো কাজের ডাক পাইনি। তাই যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগও পাচ্ছিলাম না। এই বিজ্ঞাপনটির কথা শুনে অন্য অনেকের মতো আমিও অডিশন দিতে গিয়েছিলাম রাজীব ভাইয়ার (আদনান আল রাজীব) অফিসে। তখন এই বিজ্ঞাপনের কাহিনী অনুযায়ী কিছু এক্সপ্রেশন ও ডায়ালগ দিতে বলা হয়। আমিও সাধ্যমতো চেষ্টা করেছিলাম। পরে আমাকেই নির্বাচন করা হয়। টিভিসিটা করার সময় জানতে পারি, গল্পের মেয়ে চরিত্রের যে সরলতা ও মিষ্টতা আছে তা পাওয়া গেছে আমার মধ্যেও। প্রাণ উজাড় করে কাজটি করেছি। জানতাম ভালো কিছুই হবে। তবে প্রচারের পর এত হিট করবে ভাবতে পারিনি।’ ‘আমি এই কাজটি করার পর অনেক ভালো ভালো নির্মাতা ও ব্র্যান্ডের কাজ করতে পেরেছি। অনেকে তো সরাসরি বলেছে, এই টিভিসিতে দেখেই আমাকে তাঁরা কাস্ট করেছেন। সত্যিই কাজটার সঙ্গে থাকতে পেরে খুব আনন্দিত আমি। আমার ক্যারিয়ারের চাকাটাই ঘুরে গেছে।’ টিভিসি প্রচারের পরের অভিজ্ঞতা আশার। আশাকে এই বিজ্ঞাপনটি সবার দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে অতি সহজে, কিন্তু কাজটি করতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে তাঁকে। ‘পুরো টিভিসিতে মোট তিনটি কান্নার দৃশ্য আছে। রাজীব ভাইয়া আমাকে বললেন, ‘আশা আমি এই কান্নাগুলো ন্যাচারাল চাই। এতে দর্শক অনেক বেশি কানেক্ট হবে গল্পের মধ্যে।’ আমিও কাজটি করতে চাইলাম। কিন্তু দুই ঘণ্টা ক্যামেরার সামনে চেষ্টা করেও কাঁদতে পারছিলাম না। তাই পরিচালক বললেন, তোমাকে আরো দুই ঘণ্টা সময় দিচ্ছি, কান্না করার জন্য তৈরি হও। আমি তখন দৌড়ে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম। এবং টানা দুই ঘণ্টা আমার জীবনের নানা কষ্ট, অপ্রাপ্তি ও হতাশার দৃশ্যগুলো মনে করতে লাগলাম, আর ভাবতে লাগলাম এই মেয়েটাই আমি, যার বয়ফ্রেন্ড তাঁকে ছেড়ে চলে গেছে। পরে অবশ্য ক্যামেরার সামনে কাঁদতে আর অসুবিধা হয়নি। সব দৃশ্যেই আমি সত্যি সত্যি কেঁদেছি।’ টিভিসিটির শুটিং হয়েছিল টানা চার দিন উত্তরার দিয়াবাড়ী, একটি পার্লার, খিলক্ষেতসহ বেশ কয়েকটি জায়গায়। শেষ দৃশ্যের শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা নাকি সবচেয়ে প্রিয় এই তারকার। আশা বলেন, ‘শেষ দৃশ্যে ছিল আমি আমার সহশিল্পী মনোজের হাত ধরে হেঁটে যাব। এই দৃশ্যটা এক টেকেই ওকে হয়েছিল। ইউনিটের সবাই তখন আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিল। তবে আমার কাছে দৃশ্যটি অন্য কারণে প্রিয়। তা হলো—অনেক দুঃখের পর যখন আমাদের দেখা হয়, তখন আমার মনে হচ্ছিল সত্যিই যেন আমি কিছু একটা ফিরে পেলাম, যা অনেক দিন ধরে চাচ্ছি। আর সেই ভালোলাগার অনুভূতিটাই ক্যামেরায় ভালোমতো প্রকাশ করতে পেরেছিলাম।’ এ পর্যন্ত এক ডজন টিভিসিতে মডেল হয়েছেন আশা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-এসিআই, স্পন্দন অয়েল, প্রাণ-আরএফএল ‘প্রাণ ব্রাইডাল গিফট প্যাক’ ইত্যাদি।