বিনোদন

ইমির না বলা কথা


masid rono1শাবনাজ সাদিয়া ইমি। ঠিক ঠাহর করা যাচ্ছে না। এখন যদি বলি, মডেল ইমি। ও হ্যাঁ হ্যাঁ। ছেলে-বুড়ো সবাই চিনে ফেলেছে। ওই যে কোঁকড়া চুলের দীর্ঘাঙ্গী মেয়েটা। এ মেয়েটা তো সুপার মডেল!

কিভাবে সুপার মডেল হতে হয়? কত পরিশ্রম লাগে জানতে চাইলে ইমি থমকালেন। এতক্ষণ কিন্তু হাত-পা নেড়ে ভালোই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এখন মেয়েটি স্থির। স্মৃতির দরজা খুলে চলে গেলেন ২০০১ সালে। সবে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। মায়ের কাছে বায়না ধরলেন, তিনি মডেল হবেন। এক খালা ছিলেন, চিনতেন বিবি রাসেলকে। খালার সঙ্গে গেলেন একদিন-‘বিবি আন্টি চোখে-মুখে কী যেন দেখলেন আর তক্ষুনি আমার হাত ধরে হাঁটতে লাগলেন। আমি বুঝে উঠতে পারিনি সেই ক্ষণে আমার হাতেখড়ি হয়ে গেল। এর পরের বছরই নাম দিই, ইউ গট দ্য লুক প্রতিযোগিতায়। বেস্ট মডেল হয়ে যাই।

সেই ছোট বেলায় মায়ের কোলে ইমি, সঙ্গে বোন ঝুমি
সেই ছোট বেলায় মায়ের কোলে ইমি, সঙ্গে বোন ঝুমি

এরপর থেকে তো হাঁটছি (র‌্যাম্পের মঞ্চে)। আর থামতে হয়নি।’ এরপর আরো কথা মনে জাগে। তখন তো এত মিডিয়া ছিল না। র‌্যাম্প মডেলিং শব্দটা তো চেনা ছিল না লোকজনের। আপনি কিভাবে মডেল হতে চাইলেন?

‘আমি ছোটবেলা থেকেই একটু আলাদা। শুধু যে আমার গায়ের রং, চুল বা শারীরিক গড়ন আলাদা তা-ই নয়, মনের জগৎটাও ছিল আলাদা। অন্যদের মতো নাচ, গান বা ছবি আঁকা শিখতে চাইনি। যদিও মা জোর করে চার মাস গান শিখিয়েছিলেন। আমি বরং স্পিড বোট চালক হতে চাইতাম। নয়তো নেমে পড়তাম সাইকেল নিয়ে। সাইকেলের নেশা আমার এখনো যায়নি। টিভিতে রেস দেখলে আর চোখ সরাতে পারি না। র‌্যাম্প মডেলিং ব্যাপারটা আমার মনে হঠাৎই গেঁথে গিয়েছিল। আর সরাতে পারিনি।’

আপনি আসার আগে কেমন ছিল আমাদের র‌্যাম্প? ‘তখন এ দেশে কোনো পারফেক্ট র‌্যাম্প মডেল ছিল না। হয়তো কেউ ভালো নাচ করছে, তাকে দিয়েই র‌্যাম্পে হাঁটানো হতো। বিবি রাসেল, তুপার মতো দু-একজন তো ব্যতিক্রম। তাঁরা সব সময় র‌্যাম্প মডেলিং ডেভেলপ করার জন্য সময় দিতে পারতেন না। তাই একটা দায়িত্ববোধও তৈরি হলো। ভাবলাম র‌্যাম্প মডেলিংকে একটা কাঠামো দিতে হবে, আমার সেই স্বপ্ন আজ সার্থক বলতে পারেন।’

emiইমি আবারও বলতে লাগলেন, ‘জানেন, মাঝে মাঝে মন হারিয়ে যায়। একটা সদ্য কলেজ শেষ করা ইনোসেন্ট মেয়ে ছিলাম আমি। কত যে জঞ্জাল ছিল। খারাপ লোকদের খপ্পর থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। কিন্তু আমি আজ সফল। এই তো সেদিন একজন ডিরেক্টর আমাকে বললেন-তোমার আর কিছু পাওয়ার নেই। যা ভালো লাগে তাই করো, এত ব্যস্ত না থাকলেও চলবে তোমার।’ ইমির কাজের বাইরের ব্যক্তিজীবনটাও একটু আলাদা। ডায়েট করে ফিট থাকাকে তিনি কাজের অংশ মনে করেন না, এটাকে ভাবেন নিজেকে সুস্থ রাখার কৌশল। সময় পেলেই বানাতে বসে যান ওয়ালম্যাট। ‘কাজ করতে করতে যখন ইন্টারেস্টিং কয়েকটা লাইন চলে আসে মাথায়, তখনই তা লিখে ফেলি ডায়েরিতে। পরে সময় পেলেই ওই লাইনগুলোর সঙ্গে কোনো একটি ছবি মিলিয়ে ওয়ালম্যাট বানিয়ে ফেলি। কখনো নিজের ছবি ব্যবহার করি, কখনো ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করি, আবার কখনো মনমতো না পেলে নিজেই ছবি এডিট করে ওয়ালম্যাট বানাই।’

তাঁর আরো একটা ভালোলাগা হলো ঘুরে বেড়ানো। কাজ একটু অবসর দিলেই চলে যান একা অথবা পরিবারের সঙ্গে দেশে বা বিদেশে। দেশের প্রায় সব দর্শনীয় স্থান তিনি ঘুরেছেন। আর গিয়েছেন আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, লন্ডন, সুইজারল্যান্ডের মতো দেশে। তবে ভারত তাঁকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করে। যদিও শুধু কলকাতা আর মুম্বাই গিয়েছেন। তবে সামনে চেন্নাই, কাশ্মীর, হায়দরাবাদ, দার্জিলিং, বিশেষ করে মানালির তুষারপাত দেখতে যেতে চান তিনি। এটি নাকি তাঁর জীবনের অন্যতম সেরা মুহূর্তের একটি হবে!emi4

একটি সেরা মুহূর্ত রয়েছে তাঁর জীবনে। তা হলো তিনি যখন ‘মডেল অব দ্য ডিকেড’। সেটি ২০১১ সাল। মডেলদের আইডল কৌশিকী নাসের তুপা আয়োজিত ঢাকা ফ্যাশন উইক থেকে তাঁকে এ খেতাব দেওয়া হয়। ইমি আরো বলছিলেন, ‘আমার সেরা গুণ কি জানেন, পূর্বসূরিদের সম্মান দিতে জানি। এটা জানা খুবই ইমপরট্যান্ট যে জায়গায় তুমি কাজ করছ সেই জায়গাটায় কার অবদান কী। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এখনকার মডেলরা এসেই বড় তারকা মনে করে নিজেকে। খুব কম মডেলকে খুঁজে পাওয়া যাবে যারা বড়দের অর্জন সম্পর্কে জানে। এটা নিয়ে আমি খুব চিন্তিত। এভাবে চলতে থাকলে কম সময়ে র‌্যাম্প মডেলিং যে জায়গায় পৌঁছেছে তা আবার ধুলোয় লুটিয়ে পড়বে।’IMG_6970

এক নজরে ইমি

প্রিয় ব্যক্তিত্ব : আব্বু

প্রিয় খেলা : সব ধরনের রেস

প্রিয় তারকা : কারিনা কাপুর, কঙ্গনা রানাওয়াত ও শাহরুখ খান

প্রিয় রং : সাদা

প্রিয় বই : জেমস অ্যান্ড জুয়েল

প্রিয় চলচ্চিত্র : বজরঙ্গি ভাইজান ও তানু ওয়েডস মানু রিটার্নস

প্রিয় অবসর : গান শোনা, সিনেমা দেখা

প্রিয় খাবার : থাই ফুড