বেসরকারিভাবে বছরে ৫ লাখ শ্রমিক নেবে মালয়েশিয়া


শেষ পর্যন্ত বেসরকারিভাবে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। মালয়েশিয়ার তিনটি অঞ্চলে আগামী তিন বছরে প্রায় ১৫ লাখ শ্রমিক যেতে পারবে। বছরে যাবে পাঁচ লাখ কর্মী। প্রথম ধাপের পাঁচ লাখ শ্রমিক নেওয়ার লক্ষ্যে শিগগিরই কাজ শুরু হবে। এত দিন জিটুজি (সরকার টু সরকার) পদ্ধতিতে শুধু বনায়ন খাতেই শ্রমিক নেওয়া হতো। এখন বেসরকারিভাবে সব খাতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানো হবে। গতকাল বুধবার মালয়েশিয়ার পুত্রজায়ায় বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আহমেদ জাহিদ হামিদি এ আগ্রহের কথা জানান।

বিষয়টি নিশ্চিত করে গতকাল সন্ধ্যায় মালয়েশিয়া থেকে মোবাইল ফোনে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য মালয়েশিয়ার বাজার এখন উন্মুক্ত, সব সেক্টরেই মালয়েশিয়া বাংলাদেশের শ্রমিক নিতে আগ্রহী। মালয়েশিয়ার সারওয়াক, সাবাসহ তিনটি অঞ্চলে ১৫ লাখ শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে। সব শ্রমিকই বাংলাদেশ থেকে নেওয়া হবে বলে তারা আমাকে জানিয়েছে। বছরে পাঁচ লাখ শ্রমিক মালয়েশিয়ায় পাঠানো যাবে।’

প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কিছুক্ষণ আগে সাক্ষাৎ করেছি, সেখানেও আমি তাঁকে বলেছি যে রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানো হলেও নিয়োগকর্তা অবশ্যই কর্মীর বিমান ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ বহন করবে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়ে আমার সঙ্গে একমত হয়েছেন।’

মালয়েশিয়া সফররত বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের একজন সদস্য গতকাল বিকেলে মোবাইল ফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ কর্মী নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেও অবৈধ কোনো কর্মী তাঁরা গ্রহণ করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। বেসরকারিভাবে কর্মী নেওয়ার বিষয়ে শিগগিরই মালয়েশিয়া থেকে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে আসবে এবং দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই হবে।’

প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাই কমিশন সূত্র জানায়, বেসরকারিভাবে যে ১৫ লাখ শ্রমিক মালয়েশিয়া যাবে, তাদের তিন বছরের ভিসা দেওয়া হবে এবং তারা পরবর্তী এক বছর ভিসা নবায়ন করতে পারবে। রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠানো হলেও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় বিষয়টি সরাসরি নজরদারি করবে। অনলাইনে নিবন্ধিতদের মধ্যে থেকেই কর্মী পাঠানো হবে। পুত্রজায়ায় বৈঠক শেষে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানান, মালয়েশিয়ায় বেসরকারি পর্যায়ে কর্মী পাঠানো হলেও অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণ করা হবে যৌক্তিকভাবে এবং কোনোভাবেই তা যেন কর্মীদের ওপর বোঝা হয়ে না দাঁড়ায়। শ্রমিকদের কল্যাণ ও নিরাপত্তার বিষয়টি দেখবে নিয়োগকর্তা।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল মঙ্গলবার গভীর রাতে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে পৌঁছান। মন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব খন্দকার ইফতেখার হায়দার, আইন মন্ত্রণালয়ের ড্রাফট উইংয়ের সচিব শহিদুল ইসলাম, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক বেগম শামছুন নাহার এবং প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রীর একান্ত সচিব মুহাম্মদ ইবরাহিম।

সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের পর বাংলাদেশের জনশক্তির সবচেয়ে বড় বাজার মালয়েশিয়া। অভিবাসন ব্যয় কমানো ও দালালদের প্রতারণা বন্ধ করতেই সরকারিভাবে জনশক্তি পাঠানোর চুক্তি করে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকার। জিটুজি পদ্ধতিতে মালয়েশিয়া যেতে আগ্রহী প্রায় ১৪ লাখ বাংলাদেশি অনলাইনে নিবন্ধনও করে। কিন্তু ঢাকঢোল পিটিয়ে নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ হলেও মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর হার ছিল অত্যন্ত কম। গত দুই বছরে সেখানে কর্মী গেছে মাত্র আট হাজারের কিছু বেশি। জিটুজির এমন পরিস্থিতিতে লাখ লাখ কর্মীর মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই দালালদের ফাঁদে পড়ে অবৈধভাবে সমুদ্র ও আকাশপথে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমাচ্ছে। সরকারিভাবে কর্মী যাওয়ার সংখ্যা কম হওয়ায় অবৈধপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় মালয়েশিয়া জিটুজির পাশাপাশি বেসরকারিভাবে কর্মী নেওয়ার আশ্বাস দেওয়ায় নতুন আশায় বুক বাঁধছে বাংলাদেশের কর্মীরা।

বিগত মহাজোট সরকারের আমলে ২০১২ সালে জিটুজি চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে সরকারি পর্যায়ে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো শুরু হয়। ২০০৯ সালে শ্রমবাজারটি বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো দুই থেকে তিন লাখ টাকায় কর্মী পাঠাত মালয়েশিয়ায়। কিন্তু জিটুজিতে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় কর্মী পাঠায় সরকার। এতে অভিবাসন ব্যয় কমে আসে।

কালের কণ্ঠ অবলম্বনে