স্বাস্থ্য

রাগ কমান, হার্ট সুস্থ্য রাখুন


Shekhar Baidya1সময় বিশেষে রাগ ভাল। কিন্তু মাত্রারিক্ত রাগ ভালো নয়। একথা শুধু আপনার কোনও বন্ধু, সহকর্মী, প্রতিবেশী নয়, বলছেন কলকাতা শহরের নামকরা হার্টের ডাক্তারবাবুরাও। তাঁদের সাফ কথা, রাগ না ছাড়লে হার্টের অসুখ আপনার সারাজীবনের সঙ্গী হতে পারে। এমনকী তার জন্য বড়সড় বিপদ হওয়াও অস্বাভাবিক নয়।
হার্টের অসুখ হল, হাসপাতালে ভর্তি হলেন, সারাজীবনের সঞ্চয় শেষ হয়ে গেল বা বাজারে ধারদেনা করে অ্যাঞ্জিওপ্ল্যাস্টি, বাইপাস করতে হলÑবছর বছর এই ঘটনা চলছে তো চলছেই। এবার ‘ওয়ার্ল্ড হার্ট ডে’তে তাই চিকিৎসার থেকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে হার্টের অসুখবিসুখ প্রতিরোধে। এবার হার্টের চিকিৎসকদের সবচেয়ে বড় সারা ভারতজুড়ে সংগঠন কার্ডিওলজিক্যাল সোসাইটি অব ইন্ডিয়া (সিএসআই) হার্টের অসুখ প্রতিরোধে ভারতজুড়ে নানা কর্মসূচি নিয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল ন’টায় কলকাতার কাঁকুড়গাছির হার্ট হাউস থেকে শুরু হয় সিএসআই-এর পদযাত্রা। আগামী ৪ অক্টোবর কলকাতায় সিএসআই-এর সবক’টি রাজ্যের সম্পাদক-সভাপতিরা কলকাতায় আসছেন। আসবেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের বড়কর্তারা। সেখানে হার্টের অসুখ প্রতিরোধে কী করণীয়, সেই ‘টেন কম্যান্ডমেন্টস’ প্রকাশিত হবে। প্রতিরোধে জোর দিয়েছেন ডাঃ দেবী শেঠি’র মতো বিশিষ্ট হার্ট সার্জেনরাও। একই মত বিশিষ্ট হার্ট সার্জেন ডাঃ সত্যজিৎ বসুরও। গত সোমবার বিশিষ্ট হার্ট সার্জেন ডাঃ কুণাল সরকার প্রকাশিত একটি বেসরকারি সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছৈ, অতিরিক্ত ওজনের জন্য কলকাতার ৩০-৪৫ বছর বয়স্কা ৯০ শতাংশ মহিলার হার্টের অসুখ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কলকাতার পিজি হাসপাতালের ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওভাসকুলার সায়েন্সের সাবেক অধিকর্তা বিশিষ্ট কার্ডিওলজিস্ট ডাঃ অরূপ দাস বিশ্বাসের মতে, দৈনন্দিন জীবন থেকে বেশি রাগ বস্তুটিকে ঝেড়ে ফেলার পাশাপাশি খুবই জরুরি ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করা। এটা প্রমাণিত সত্য যে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা করলে হার্টের অসুখের আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়। টানা পাঁচ-ছ’ ঘন্টা কম্পিউটারে বসে কাজ করলে শুধু কোমর-পিঠ ব্যথার সমস্যাই নয়, হার্টের অসুখও হতে পারে বলে জানিয়েছেন অরূপবাবু। তাঁর মতে, কাজ করতে করতে মাঝে মধ্যে বিরাম জরুরি। নীরোগ হার্টের জন্য একটি জরুরি বিষয় হল ভালো ঘুম।
সিএসআই-এর সর্বভারতীয় সভাপতি (নির্বাচিত) ও কলকাতা মেডিকেল কলেজের কার্ডিওলজি’র প্রধান ডাঃ শান্তনু গুহ বলেন, রক্তচাপ নিয়ে মানুষ কতটা সচেতন, তা জানতে কিছুদিন আগে আমরা সর্বভারতীয় কর্মসূচি নিয়েছিলাম। সেখানে ১ লক্ষ ৬০ হাজার মানুষের রক্তচাপ মাপা হয়। দেখা যায়, উচ্চ রক্তচাপ থাকা তিনভাগের এক ভাগ মানুষ জানেনই না তঁঅর উচ্চ রক্তচাপ আছে। মাত্র ২০-৩০ শতাংশ মানুষ হাইপারটেনশনের চিকিৎসা করান। আর হাই ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখেন মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ। এই রিপোর্ট জানার পর আমরা হার্টের অসুখ প্রতিরোধের জন্য বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়েছি।
বিশিষ্ট হার্ট সার্জেন সত্যজিৎবাবু বলেন, হার্টের অসুখের জন্য হাসপাতালে যাওয়া ও রোগীদের পকেট কাটা বন্ধ হবে তখনই, যখন প্রিভেনটিভ হার্ট কেয়ার গুরুত্ব পাবে। জেনে রাখা ভালো, প্রথম বিশ্বের দেশগুলিতে শারীরিক গঠনের জন্য ২২ বছর বয়সে ধমনিতে কোলেস্টরল জমতে আরম্ভ করে। আর এখানে ? মাত্র পাঁচ বছরে! সুতরাং ছোটবেলা থেকে চিপস, বার্গার, পেস্ট্রি খাওয়া বন্ধ করা, জীবনযাপন নিয়ে সচেতন করানো জরুরি। না হলে শুধু কাতারে কাতারে, বাইপাস, অ্যাঞ্জিওপ্ল্যাস্টি হবে, কর্পোরেট সংস্থাগুলির পকেট ভরবে। মূল সমস্যার সমাধান হবে না।
ওয়ার্ল্ড হার্ট ডে’র প্রাক্কালে ভারতের অন্যতম সেরা হার্ট সার্জেন ডাঃ শেঠির সোজাসাপটা বক্তব্য, হার্ট সুস্থ থাকার রহস্য আনন্দে থাকা। আনন্দে থাকুন, আধ্যাতিœকতার চর্চা করুন, ব্যায়াম করুন, পরিশ্রম করুন। দেখবেন কতটা নীরোগ আর ঝরঝরে লাগছে আপনাকে।