কী অদ্ভুত!

আজব কারাগার!


আজব এ কারাগারের নাম বেস্টয় প্রিজন। নামে জেলখানা হলেও এখানকার হালচাল দেখলে যে কারো রিসোর্ট বলে ভ্রম হবে। এখানে না আছে কোনো তারকাঁটা দেওয়া উঁচু দেয়াল, না আছে কোনো ঘুপচির মতো গারদ। তেমনি এখানে ভারিক্কি পোশাক পরে টহল দেয় না পুলিশ আর ভয়ংকর দর্শন কুকুরের দল। ১৯৮২ সালে গড়ে ওঠা একবর্গমাইলের এ দ্বীপের কারাগারটি কারাগারের সংজ্ঞাই যেন পাল্টে দিয়েছে। পুরো দ্বীপের যেকোনো জায়গায় অনায়াসে যেতে পারে কয়েদিরা। দ্বীপের ফোন বুথ থেকে ফোনে কথাও বলতে পারে আত্মীয়স্বজন আর বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে।

কারাগারের ১১৫ জন কয়েদির তো রীতিমতো পোয়াবারো। তাই বলে আবার ভাববেন না যে ছিঁচকে চোরদের লঘু শাস্তি দেওয়ার জন্য এ দ্বীপে এনে এমন নবাবি হালে রাখা হয়। খুন, রাহাজানি আর ডাকাতির মতো গুরুতর অপরাধ করা আসামিদের সংখ্যাই বেশি এখানে। আর এমন ভয়ানক অপরাধীদের যদি রংবেরঙের কটেজে থাকতে দেওয়া হয় আর সাগরের মাঝের মনোরম এক দ্বীপে এমন আয়েশি জীবন যাপন করতে দেখা যায়, তবে যে কারো কপালে একটু ভাঁজ পড়া স্বাভাবিক। বিশেষ করে গুরুতর অপরাধ করা মানুষজনের কঠিন শাস্তি পাওয়া উচিত, এটাই সাধারণ ধারণা। তাই বেশির ভাগ মানুষই বেস্টয় কারাগারে আসামিদের এমন আরাম-আয়েশে রাখাটা মোটেও যুক্তিযুক্ত মনে করেন না।

 

অবশ্য যাঁরা সাধারণ জেলখানার বোলই পাল্টে দিয়েছেন এমন এক জেলখানা বানিয়ে, তাঁদেরও নিশ্চয়ই কোনো না কোনো যুক্তি রয়েছে এর পেছনে। এখানকার এক সাবেক গভর্নর নিলসেনের মতে, যদি কারাগারে এনে কোনো আসামির ব্যবহার আর আচরণ পরিবর্তনই করা না যায়, তবে আর কারাগার থেকে লাভ কী? তাই তাঁরা এখানে কয়েদিদের এমন জীবনযাপনে অভ্যস্ত করেন, যাতে তারা শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বের হয়ে ভদ্র ও সভ্য জীবন যাপন করতে পারে।

এ উদ্দেশ্য যে একেবারেই অমূলক তাও নয়। দেখা গেছে, এখান থেকে বের হওয়া আসামিদের মধ্যে বেশির ভাগই খারাপ কাজ করা ছেড়ে দেয়। মাত্র ১৬ শতাংশ হয়তো আবার অপরাধ করে, তবে সংখ্যাটি যে নেহাতই কম, তা বলতেই হয়।

দ্বীপবাসী কয়েদিদের রোজকার দিনগুলো একেবারেই আর দশটা সাধারণ মানুষের মতো। রোজ সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শুরু করে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত কাজ করতে হয় সবাইকে। কাজের বিনিময়ে তাদের প্রত্যেকেই রোজ ১০ ডলার পায়। তা দিয়ে দ্বীপের দোকান থেকে পছন্দমতো যেকোনো কিছু কিনতেও পারে তারা। খাবারের জন্য আবার আলাদা করে মাসে ১২৫ ডলার দেওয়া হয় প্রত্যেককে।

আজব এই কারাগারে খাবারেরও কমতি নেই। বাকি জেলখানার মতো শুকনো রুটি কিংবা ডাল খেয়ে এখানকার আসামিদের দিন পার করতে হয় না। উল্টো রাঁধুনির কাছে গিয়ে খাবার চাইলে হাতে ধরিয়ে দেবে হরেক খাবারের মেন্যু। মাছ, চিংড়ি, মুরগিসহ হরেক পদের খাবার প্রস্তুত হয় এখানের হেঁসেলে।

 

কাজের পাশাপাশি কেউ পড়াশোনা করতে চাইলে সে ব্যবস্থাও আছে। দ্বীপের মাঝামাঝি জায়গায় রয়েছে একটি হলুদ বাড়ি, যেখানে নানা বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ আছে, শেখানো হয় কম্পিউটারের নানা বিষয়ও।

আর দশটা কয়েদখানার মতো এ জেল থেকেও যে পালানোর চেষ্টা কেউ করেনি তা নয়। সাগর ঘিরে থাকায় অবশ্য নৌকায় করেই পালাতে হতো। পালানোর পর সব সময়ই ধরা পড়ে গেছে কয়েদিরা। তবে সাম্প্রতিক অতীতে পালানোর চেষ্টার নজির আছে কমই। অবশ্য সাজা হিসেবে যদি এমন আরামের জীবন পাওয়া যায়, তবে কারো পালানোর কথা তো মাথায়ই আসার কথা না।

-কালের কন্ঠ অবলম্বনে