প্রবাস

করোনায় সুবিধাবঞ্চিতদের পাশে বিপিসিসি

রফিকুল ইসলাম আকাশ, ওয়াশিংটন ডিসিঃ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামস (অব:) দেশী-বিদেশী বন্ধূদের নিয়ে গঠন করলেন Virtual Patient Care Centre (VPCC)। VPCC-তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে আমেরিকা, বাংলাদেশ ও ভারতের ৮ জন খ্যাতিমান ডাক্তারকে। চীনা ডাক্তারদেরও অন্তর্ভুক্ত করার প্রচেষ্টা চলছে। শামস মনে করেন, “করোনাভাইরাস মহামারী বিশ্ব অর্থনীতিতে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে, ফলে অধিকাংশ দেশই গতানুগতিক পদ্ধতিগুলো পরিবর্তন করে আধুনিক ‘কার্যকরী মডেল’ বিবেচনা করছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে ‘ONLINE’ এর মাধ্যমে ‘চিকিৎসা সেবা’ প্রদান পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর ও সময়োপযোগী হতে পারে।

তিনি বলেন, “এ দুঃসময়ে নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে পল্লী অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোর জন্যেই VPCC সৃষ্টি করেছি। পল্লী অঞ্চলে আমাদের দেশের প্রায় ৮০% মানুষ বসবাস করে। মহামারী করোনা হতে দেশকে বাঁচাতে হলে তাদেরকে বাঁচাতে হবে এবং তাদের জন্যে অবশ্যই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করতে হবে।”   

তরুণ স্বেচ্ছাসেবকদের দ্বারা পরিচালিত সম্পূর্ণ অলাভজনক এ সংগঠনটির উদ্দেশ্য হলো: ১) সচেতনতামূলক অভিযান: শিক্ষিত তরুণ স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে পল্লী অঞ্চলে করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত ‘সচেতনতা অভিযান’ পরিচালনা করা ২) দূরবর্তী পদ্ধতিতে চিকিৎসা প্রদান: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, টেলিফোন বা ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান এবং প্রয়োজনে হাসপাতালে স্থানান্তর। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী হতে অবসরপ্রাপ্ত মেডিকেল এসিস্টেন্ট, ও প্যারামেডিকস গণ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন। ৩) মানবিক সহায়তা: VPCC সদস্যদের উদ্যোগে অভাবী পরিবারগুলোকে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ করা। ৪) দাফন কার্য  সম্পাদন: পরিবেশ দূষণ, সংক্রমণ ও স্বাস্থ্যের ঝুঁকি এড়াতে মৃত ব্যক্তির জন্য সরকারী নির্দেশনা ও ধর্মীয় প্রথানুযায়ী প্রয়োজনে দাফন কার্য সম্পাদন করা। স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে মসজিদের ইমাম, শিক্ষক, এবং শিক্ষিত তরুণদেরকে VPCC-তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

করোনা একটি মারাত্মক রোগ তবে প্রথম থেকেই যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা করা হয় তবে নিরাময় করা সম্ভব। বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা থেকে এটা পরিষ্কার যে বেশিরভাগ রোগী ঘরে বসেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসার মাধ্যমেই COVID-১৯ রোগ থেকে সেরে উঠেছে। যদিও গুরুতর রোগীদেরকে অবশ্যই হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট গুলোতে চিকিৎসা দিতে হবে। VPCC’র পদ্ধতিতে অল্প সংখ্যক চিকিৎসক দ্বারা ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

ইতোমধ্যেই VPCC FACE BOOK Page এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের রোগীদেরকে (https://www.facebook.com/VirtualPatientCareCenter/?) সেবা দেয়া হচ্ছে। দু’দিন আগে দুবাই থেকে ৪২ বছর বয়সী মোঃ ইসমাইল নামের একজন রোগী জানালেন, “ঠিকমতো হাঁটতে পারছি না, মাথা ঘুরানি আছে, হাঁটার সময় এক দিকে পা রাখলে রাখলে অন্য দিকে চলে যায়। কোনো ডাঃ পাইতেছি না। দয়া করে সহযোগিতা করবেন।” VPCC সাথে সাথে প্রয়োজনীয় ডাক্তারী পরামর্শ প্রদান করেছে এবং রোগী এখন ভালোর দিকে।

এ ধরণের রোগীরাই প্রতিষ্ঠানটির অগ্রাধিকার। যাদের পক্ষে ডাক্তারদের কাছে যেয়ে ডাক্তারি সেবা নেয়া প্রায় অসম্ভব। গ্রামের কয়জন রোগীর পক্ষে ডাক্তারদের কাছে যেয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব? এক্ষেত্রে VPCC অ্যাপোলো হাসপাতাল এর মতো প্রতিষ্ঠানের সেরা ডাক্তারদের মাধ্যমে ‘বিনা খরচে ‘চিকিৎসা সেবা’ পৌঁছে দিচ্ছে গ্রামের রোগীদের কাছে। আর সাথে থাকছে আমেরিকা ও ভারতের অভিজ্ঞ ডাক্তারগণ। তাদের দু’জন নিউ ইয়র্কের হাসপাতালে করোনা রোগীদের বর্তমানে সেবা প্রদান করছে। VPCC’র লক্ষ্য একটাই: করোনা ভাইরাস থেকে দেশের মানুষকে যত বেশি সম্ভব রক্ষা করা।