বিনোদন

ফিরেই আলোচনায় সোনিয়া


masid rono1সোনিয়া হোসেন। টিভি নাটকের নিয়মিত মুখ। মুখ দেখিয়েছেন সিনে পর্দায়ও। তবে এই তারকার প্রিয় টেলিভিশন বিজ্ঞাপন। সোনিয়ার বিজ্ঞাপন জগতের খোঁজ নিয়েছেন মাসিদ রণ। ছবি তুলেছেন শামছুল হক রিপন

মিডিয়ায় একটা কথা চালু আছে—যত বেশি সম্ভব পর্দায় থাকো, নয়তো সবাই তোমায় ভুলে যাবে। কিন্তু এই প্রচলিত ধারণাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ঠিকই আগের জায়গা ফিরে পেয়েছেন সোনিয়া হোসেন। শুধু তা-ই নয়, মিডিয়ায় তাঁর পথচলা আগের থেকে হয়েছে মসৃণ ও বর্ণিল। সোনিয়া মিডিয়ায় যাত্রা শুরু করেন ‘ইউ গট দ্য লুক’-এর মতো জনপ্রিয় ট্যালেন্ট হান্ট আয়োজনের মাধ্যমে। এ প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় আসরে তিনি সেরাদের একজন। সেটি ২০০৩ সালের কথা। অনেকটা কৌতূহলে নাম দিয়েছিলেন ‘ইউ গট দ্য লুক’-এ। বয়স সবে ১৬ পেরিয়েছে। ছিল না কোনো অভিজ্ঞতা বা কোনো গ্রুমিং। কিন্তু সেই মেয়েটিই প্রতিযোগিতার দিনগুলোতে প্রোপার অনুশীলনের মধ্য দিয়ে হয়ে ওঠেন একজন আদর্শ মডেল, পেয়ে যান একজন অভিনেত্রী হওয়ার রাস্তাও। তখন মিডিয়ায় নতুনদের সংখ্যা কমই ছিল। কেউ ভালো করলে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হতো না। সোনিয়াও বেশ কয়েক বছর অভিনয়, র‌্যাম্প ও টিভি বিজ্ঞাপন চালিয়ে যান। এর পরই লেখাপড়ার জন্য পাড়ি জমান ইংল্যান্ডে। সেখান থেকে ফিরে আবারও মিডিয়ায় নিয়মিত হন ২০১৩ সালের শেষের দিকে। এ জন্য তাঁর সঙ্গে আলাপচারিতায় তাঁর দুই ইনিংসের কথা চলে আসে সমান্তরালভাবে। প্রথমে বলেন, প্রথম দিককার কথা। তখন বয়স অল্প ছিল, তাই কাজ নির্বাচন করতে বেগ পেতে হতো সোনিয়াকে। সে সময় অনেক কাজ করেছেন।IMG_0228

বিশেষভাবে মনে পড়ল দুটির কথা। একটি বানিয়েছিলেন গুণী নির্মাতা তন্ময় তানসেন। জনপ্রিয় অভিনেতা সজলের সঙ্গে লর্ড বলপেনের টিভিসি ছিল সেটি। কলমের খোঁচায় প্রেমের সে পাট বেশ ভালোমতোই চুকিয়েছিলেন তিনি! তবে সিটিসেলের প্রথম টিভিসিটা তাঁকে অনেক আনন্দ দেয়। ইংল্যান্ডে পড়তে যাওয়ার কয়েক দিন আগে এই টিভিসি করেছিলেন। আর প্রচারের সময় তিনি বিদেশ-বিভূঁইয়ে। কিন্তু আলোচনা তাঁর পিছু ছাড়েনি। সাধারণ ভক্ত-দর্শকের হাত থেকে রেহাই পেলেও বন্ধুবান্ধব আর আত্মীয়স্বজন ঠিকই তাঁকে ওই টিভিসি নিয়ে খেপাত। কারণ এতে তিনি রিকশাওয়ালার সঙ্গে হেসে হেসে সিটিসেল ফোন দিয়ে আলাপ করেন! বন্ধুরা মজা করে বলত, ‘তুই আর মানুষ পেলি না। খুঁজে খুঁজে রিকশাওয়ালার সঙ্গে প্রেম করতে হলো!

আমাদের কী মনে ধরে না?’

এটা ছিল মিষ্টি খোঁচা। কিন্তু মায়ের মন সত্যিই বড্ড খারাপ হয়। মেয়ের সঙ্গে রিকশাওয়ালার এই সম্পর্ক স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেননি। ভাগ্যিস ব্রিটেনে রিকশাওয়ালা নেই!

মা এখনো তাঁর কাজের সমালোচনা করেন। কোনোভাবেই চান না মেয়ে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করুক। বলেন, ‘তুই কি বুড়ি হয়ে গেছিস যে মায়ের অভিনয় করা লাগবে?’

বিশেষ করে বর্তমানে প্রচার চলতি অ্যালপেন লিবে চকোলেটের টিভিসিতে মেয়েকে পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া বাচ্চার মা হতে দেখে মা খুব রাগ করেছেন। মা বলেছেন,‘আর কখনো এমন চরিত্র না করতে। তিনি বরং ইউটার্ন ছবির গ্ল্যামারাস মেয়েটা অথবা প্রাণ লাচ্ছির করপোরেট মেয়েটাকে বেশি পছন্দ করেন। প্রাণ লাচ্ছির টিভিসিটা স্টার প্লাসে দেখাত। মা ভীষণ খুশি হতেন, সিরিয়ালের ফাঁকে মেয়েকে দেখে। ওই টিভিসির মতো চমৎকার দেখতে লাগে এমন চরিত্রেই তিনি সব সময় আমাকে উৎসাহ দেন।’ হাসতে হাসতে বললেন সোনিয়া।

তবে অ্যালপেন লিবের এই টিভিসিটা দর্শক বেশ পছন্দ করছে। ক্রিকেটকে কেন্দ্র করে টিভিসির কাহিনী বলে বিপিএলজুড়ে অসংখ্যবার দেখা গেছে ‘রাগী বউ’ সোনিয়াকে। যিনি সিরিয়াল দেখার সময় বর ক্রিকেট খেলা দেখেছে বলে তেলেবেগুনে জ্বলতে থাকেন!

সোনিয়া বললেন, ‘এখানে হিল্লোল আমার স্বামী। অনেক দিন পর তাঁকে কোনো টিভিসিতে দেখা গেছে। আমরা নাটকে অনেক কাজ করেছি, তাই খুব সহজে চরিত্রে ঢুকতে পেরেছিলাম। আর যে বাচ্চাটা আমাদের সঙ্গে ছিল সে ও তার মা খুবই মিশুক। আমি বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটোরিয়াল স্কুলে পড়তাম, ওই ছেলেটিও একই স্কুলের। তাই আড্ডাটা বেশি করে জমেছিল। কিন্তু টিভিসির শেষের দৃশ্যে চকোলেটের স্বাদ নেওয়ার দৃশ্যটি করতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। গুনে গুনে ২৫ বার ওই শটটি দিতে হয়। কিন্তু টিভিসি প্রচারের পর দেখি সেই দৃশ্যটি নেই। তখন খুব মন খারাপ হয়েছিল। কিন্তু দর্শক পছন্দ করেছে বলে দুঃখ উবে গেছে কবে।’

এ বছর সোনিয়াকে আরো দুটি টিভিসিতে দেখা গেছে। প্রাণ লাচ্ছি ও মিস্টার নুডলস।SONIA2

এর মধ্যে প্রাণ লাচ্ছির টিভিসিটি করতে গিয়ে বিচিত্র এক অভিজ্ঞতা হয় এই মডেলের। সোনিয়া বলেন, ‘শুনেছিলাম, এখানে বরফের দৃশ্য আছে। তাই ভেবেছিলাম, দেশের বাইরে কোথাও শুটিং হবে। আদতে দেখি কৃত্রিমভাবে সব আয়োজন করা হয়েছে দেশেই। ৫০ কেজি লবণ আর সেভিং ক্রিমের মিশ্রণের মধ্যে আমাকে বসিয়ে দেওয়া হয়। শট দিতে গিয়ে মুখে লবণের স্বাদে একেবারে অস্থির হয়ে পড়েছিলাম। পরে অবশ্য টিভিতে টিভিসিটি দেখে একদমই বুঝতে পারিনি যে ওটা লবণ ছিল।’

সোনিয়া ইংল্যান্ড থেকে এসে প্রথমেই করেন ইতালিয়ানো মেলামাইনের টিভিসিটি। এর জন্য টানা ২২ ঘণ্টা কাজ করতে হয়েছিল। কিন্তু মডেলিং ভীষণ পছন্দ করেন বলে ঠিকই কাজটি করে ফেলেন।

এরপর আরএফএল ব্রাইট কুকওয়্যার, ইউরোপা বিস্কুট, মাইক্যাশের টিভিসিগুলোর মডেল হয়েছেন। কয়েক দিনের মধ্যেই সাফোলা তেলের টিভিসির মডেল হবেন বলে জানালেন সোনিয়া।