ইসলাম

শবে মেরাজের বিস্ময়কর ঘটনা


জাকির হোসাইন আজাদী
মানবকুলের শিরোমনি এবং নবী ও রসূলদের মুকুটমনি হযরত মুহাম্মদ (স.) একদা মক্কাতে শিআবে আবূ ত্ব-লিবে অবস্থিত তাঁর চাচাতো বোন উম্মে হা-নীর ঘরে এশার নামায পড়ে শুয়েছিলেন। তখন তাঁর একপাশে নিদ্রিত ছিলেন প্রাণপ্রিয় চাচা হামযা এবং অন্যপাশে ঘুমাচ্ছিলেন তাঁর অন্তরঙ্গ চাচাতো ভাই জাফর (রা.) (ফতহুল বারী)। অতঃপর তাঁর ঘরের ছাদ ফুঁড়ে জিবরীল আমীন ও মীকায়ীল (আ.)-এর আগমন তাঁর কাছে হয়। তখন তিনি ঘুমন্ত ও জাগ্রত অবস্থার মাঝামাঝি পর্যায়ে ছিলেন। অতঃপর জিবরিল তাঁকে ঐ ঘর থেকে বের করে মসজিদুল হারামের দিকে হাত্বীমের কাছে নিয়ে আসেন। তখন তাঁর মধ্যে ঘুমের ভাব ছিল। এরপর জিবরীল তাঁর সীনা থেকে নাভীর ওপর পর্যন্ত ফেড়ে এবং তাঁর বুক ও পেট থেকে কিছু বের করে সেটাকে যমযম পানি দিয়ে ধুয়ে তাঁর পেটটাকে পাকসাফ করে দেন। তারপর তিনি সোনার একটি তশ্তরী আনেন। যা ঈমান ও হিকমত (শরীআতী জ্ঞান) দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল। তদ্বারা তিনি তার সীনাটাকে ভরে দেন এবং তার ফাড়া অংশটা ঠিকঠাক করে দেন (বুখারী ১ম খন্ড, ৫৪ পৃষ্ঠা, মুসলিম ১ম খণ্ড, ৯২ পৃষ্ঠা, মিশকাত ৫২৬-৫২৭ পৃষ্ঠা)। তাঁর বুক অপারেশনের কারণে তিনি তন্দ্রালু অবস্থায় যখন কাবা শরীফের নিকটবর্তী হিজর তথা হাত্বীমে ছিলেন তখন জিবরীল তার পায়ে টোকা মারেন। তিনি উঠে বসে কাউকে দেখা না পেয়ে শোবার জায়গায় ফিরে যান। আবার জিবরীল তাঁর পায়ের পাতায় টোকা মারেন। ফলে তিনি উঠে বসেন। এবার জিবরীল তাঁর হাতটা ধরেন। অতঃপর তিনি তার সাথে উঠে দাঁড়ান। তারপর মসজিদুল হারামের দরজার দিকে তিনি রওয়ানা হন। ওখানে একটি সাদা জন্তু ছিল। যা গাধা ও খচ্চরের মাঝামাঝি ছিল। তার দুটি উরুর মধ্যে দুটি ডানা ছিল। যা তার পা দুটির কাছাকাছি ছিল (তফসীরে ত্ববারী, ১৫ খণ্ড, ৩য় পৃষ্ঠা)। ঐ জন্তুুটির নাম বুরা-ক্। ওর বর্ণনা সা’লাবীর দুর্বলসূত্রে আছে যে, ওর চেহারাটা মানুষের চেহারার মত। ওর পায়ের ক্ষুরটা জন্তুদের পায়ের ক্ষুরের মত। ওর লেজটা বলদের লেজের মত। ওর আগেপিছেটা ঘোড়ার মত। ওকে যখন রাসূলুল্লাহর কাছে আনা হয় তখন সে লাফালাফি করতে থাকে। ফলে জিবরীল তাকে ছুঁয়ে বলেন, হে বুরাক! তুমি মুহাম্মদ (স.) দেখে লাফালাফি করো না। আল্লাহর কসম! তোমার ওপর এমন কোন ফেরেশ্তা চড়েনি এবং এমন কোন প্রেরিত নবীও সওয়ার হননি যিনি মুহাম্মদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হতে পারেন এবং তিনি আল্লাহর নিকটেও তাঁর চেয়ে মর্যাদাবান হতে পারেন (তফসীরে কুরতুবী, ১০ম খণ্ড, ১৩৬ পৃষ্ঠা) তিরমিযীতে আনাসের বর্ণনায় আছে, তখন বুরাকটি ঘামেতে ভিজে যায়। ইবনে ইসহাকের বর্ণনায় আছে, বুরাকটি তখন কাঁপতে থাকে। পরিশেষে সে যমীনে ঠেকে যায়। অতঃপর রসূলুল্লাহ (স.) তাতে সওয়ার হন। নাসায়ীতে আনাসের বর্ণনায় আছে, ঐ বুরাকটিকে অন্য নবীদের জন্যও নিয়োজিত করা হতো। বিশিষ্ট তা-বিয়ী সায়ীদ ইবনুল মুসাইয়িব বলেন, এই বুরাকটি সেই জন্তু, যাতে চড়ে ইবরাহীম নবী (সিরিয়া থেকে মক্কায় তার পুত্র) ইসমায়ীলকে দেখতে আসেন। ঐ বুরাকটির দৃষ্টি যতদূর যেত ততদূরে তার পা পড়তো (ফাতহুল বারী) আনাসের বর্ণনায় ইবনে জারীর বলেন, বুরাকে চড়ার পর রসূলুল্লাহ (স.) জিবরীলের সাথে বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে রওয়ানা হন। হঠাত্ রাস্তার একদিকে তিনি একটি বুড়ীকে দেখতে পান। তিনি (স.) বলেন, এটা কে? হে জিবরীল! তিনি বলেন, চলুন, হে মুহাম্মদ! তিনি চলতে থাকেন। আবার রাস্তার ধারে একটি জিনিস তাঁকে ডাকলো, আসুন, হে মুহাম্মদ! তখন জিবরীল তাঁকে বলেন, চলুন, হে মুহাম্মদ! তাই তিনি চলতে লাগলেন। অতঃপর আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে কিছু সৃষ্টির সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত্ হল। তাঁরা বললেন, আসসালা-মু আলাইকা, হে হা-শির (যাঁর পরে কেউ নেই)। তখন তাঁকে জিবরীল (আ.) বলেন, আপনি সালামের জওয়াব দিন। তাই তিনি সালামের জওয়াব দিলেন। তারপর তিনি দ্বিতীয় ও তৃতীয়জনের সাক্ষাত্ পেলেন। তাঁদেরকেও তিনি ঐরূপ বললেন। পরিশেষে তিনি বাইতুল মুকাদ্দাসে পৌঁছে গেলেন। অতঃপর তাঁর কাছে পানি ও শারাব এবং দুধ পেশ করা হল। তখন রসূলুল্লাহ (স.) দুধটাকে গ্রহণ করলেন। অতঃপর জিবরীল আলাইহিস সালাম বলেন, আপনি স্বভাবজাত প্রকৃতিকে পেয়ে গেছেন। আপনি যদি পানিটা পান করতেন তাহলে আপনি ডুবে যেতেন এবং আপনার উম্মতও ডুবে যেত। আর আপনি যদি শরাব পান করতেন তাহলে আপনি পথভ্রষ্ট হতেন এবং আপনার উম্মতও বিভ্রান্ত হয়ে যেত। তারপর জিবরীল বলেন, সেই বুড়ীটা যাকে আপনি রাস্তার ধারে দেখেছিলেন সে হচ্ছে পৃথিবীর সেই অংশ যতটা বয়স এই বুড়ীটার বাকী আছে। আর সে চেয়েছিল যে, আপনি তার প্রতি আকৃষ্ট হন। সে ছিল আল্লাহর দুশমন ইবলীস। সে চেয়েছিল যে, আপনি তার দিকে ঝুঁকে যান। আর যারা আপনাকে সালাম দিয়েছিলেন তারা হলেন ইবরাহীম এবং মুসা ও ঈসা (আ.) (তাফসীরে ত্ববারী, ১৫ খণ্ড, ৫ম পৃষ্ঠা)। হাফেজ ইবনে কাসীর বলেন, এর কোন কোন শব্দে আপত্তি এবং অভিনবত্ব আছে (তাফসীর ইবনে কাসীর, ৩য় খণ্ড, ৬ষ্ঠ পৃষ্ঠা)। মুসনাদে বাযযার ও ত্ববারানীতে এবং বাইহাকীর দালা-য়িলুন নুবওঅতে শাদ্দাদ ইবনে আওসের বর্ণনায় আছে যে, রসূলুল্লাহ (স.) বলেন, যখন আমরা খেজুর গাছওয়ালা একটি যমিনে পৌঁছলাম তখন জিবরিল বলেন, আপনি এখানে নামুন এবং নামায পড় ুন। তাই আমি নামলাম এবং নামায পড়লাম। তারপর আমরা বুরাকে চড়লাম। অতঃপর জিবরিল বলেন, আপনি কি জানেন, আপনি কোথায় নামায পড়লেন? আমি বললাম, আল্লাহ ভাল জানেন। এবার জিবরিল বললেন, আপনি নামায পড়লেন, ইয়াসরিবে (মদীনা শরীফের পুরাতন নাম) তথা ত্বইবাতে। নাসায়ীর বর্ণনায় আছে, এটাই আপানর হিজরতের জায়গা হবে ইন-শা-আল্লাহ! অতঃপর বুরাকটি চলতে লাগলো এবং যেখানে তার দৃষ্টি পড়ছিল সেখানে সে তার পা-টি ফেলছিল। তারপর আমরা একটি জায়গায় পৌঁছলাম। জিবরীল আমাকে বললেন, এখানে নামুন এবং নামায পড় ুন। তাই আমি নামলাম এবং নামায পড়লাম। অতঃপর জিবরীল বললেন, আপনি কি জানেন, আপনি কোথায় নামায পড়লেন? আমি বললাম, আল্লাহ ভালো জানেন। তিনি বললেন, আপনি মাদ্য়্যান শহরে নামায পড়লেন মূসার গাছের নীচে। অন্য বর্ণনায় আছে, এটা সিনাই পর্বত। যেখানে আল্লাহ মূসার সাথে কথা বলেছিলেন। অতঃপর বুরাকটি তার দৃষ্টি পর্যন্ত পা ফেলে চলতে লাগলো। তারপর আমরা একটা জায়গায় পৌঁছলাম। যার সৌধগুলো আমাদের সামনে প্রকাশিত হল। তখন জিবরীল বললেন, এখানে নামুন এবং নামায পড় ুন। তাই আমি নামলাম এবং নামায পড়লাম। তারপর আমরা বুরাকে চড়লাম। অতঃপর জিবরীল বললেন, আপনি কি জানেন, আপনি কোথায় নামায পড়লেন? আমি বললাম, আল্লাহ ভালো জানেন। তিনি বললেন, এটা বাইতুল লাহাম। যেখানে মারয়্যামের পুত্র ঈসা মাসীহের জন্ম হয়েছিল। তারপর বুরাক আমাদের নিয়ে চললো। পরিশেষে আমরা ইয়ামনী দরজা দিয়ে বাইতুল মুকাদ্দাসের শহরে ঢুকলাম।
অতঃপর আমি মসজিদটির কিবলার দিকে এলাম। তারপর তিনি ওখানে বুরাকটি বাঁধলেন। তারপর আমি বাইতুল মুকাদ্দাসের মুসজিদে-আকসায় ঢুকলাম। অতঃপর আমার সামনে নবীদের জমায়েত করা হল। তারপর জিবরীল আমাকে এগিয়ে দিলেন। পরিশেষে আমি তাঁদের ইমামতি করলাম (তফসীর ইবনে কাসীর, ৩য় খণ্ড, ৭ম পৃষ্ঠা)। বাইহাকির দালায়িলুন নবুওঅতে ও ইবনে আসা-কিরে আবূসায়ীদ খুদ্রীর বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন, আমি যখন বুরাকে চড়ে বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে যাচ্ছিলাম তখন একজন আহ্বানকারী ডান দিক থেকে ডাক দেয়, হে মুহাম্মদ, আমাকে দেখুন। আমি আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করবো। কিন্তু আমি জওয়াব দেয়নি। তারপর একজন আহ্বানকারী বাম দিক থেকে আমাকে ডাক দেয়, হে মুহাম্মদ! আমাকে দেখুন। আমি আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করবো, কিন্তু আমি জওয়াব দেয়নি। তারপর আমরা চলতেই থাকি। ইত্যবসরে একটি নারী তার বাহু দুটি উলঙ্গ করে এবং সবরকম সৌন্দর্য যা আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন তার মধ্যে তা রয়েছে। অতঃপর সে বলে, হে মুহাম্মদ! আমাকে দেখুন, আমি আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করবো। আমি তার দিকে তাকালাম না। পরিশেষে আমরা বাইতুল মুকাদ্দাসে এসে গেলাম। অতঃপর আমি আমার জন্তুটাকে সেই চক্রে বাঁধলাম, যাতে নবীগণ (তাঁদের জন্তুগুলো) বাঁধতেন। তারপর আমি পথে আমাকে আহ্বানকারীদের সম্পর্কে জিবরীলকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, ডাকদিকের আহবানকারীটি ইহুদী। আপনি যদি ওর ডাকে সাড়া দিতেন তাহলে আপনার উম্মত ইহুদী হয়ে যেত। বামদিকের আহ্বানকারীটি খৃষ্টান। আপনি যদি ওর ডাকে সাড়া দিতেন তাহলে আপনার উম্মত খৃষ্টান হয়ে যেতো। আর উলঙ্গ বাহু রংঢং করা নারীটি এই পৃথিবী। আপনি যদি ওর ডাকে সাড়া দিতেন তাহলে আপনার উম্মত পরকালের উপর এই দুনিয়াকে প্রাধান্য দিত। তারপর আমি এবং জিবরীল বাইতুল মুকাদ্দাসে প্রবেশ করলাম। অতঃপর আমাদের প্রত্যেকেই দু-রাকাআত নামায পড়লাম। আবু সায়ীদ খুদরীর (রা.) বর্ণনায় আছে, নবী (স.) বলেন, আমি যখন বাইতুল মুকাদ্দাসের কর্মসূচি থেকে অবসর পেলাম তখন একটি সিঁড়ি আমার কাছে আনা হল। এর চেয়ে সুন্দর জিনিস আমি দেখিনি। এটাই সিঁড়ি যার দিকে মরণাপন্ন ব্যক্তি চেয়ে থাকে যখন তার কাছে মরণ হাজির হয়। অতঃপর জিবরীল আমাকে তাতে চড়িয়ে দিলেন। পরিশেষে আমি আকাশের দরজাগুলোর মধ্যে একটি দরজার কাছে পৌঁছলাম। যার নাম বা-বুল হাফাযাহ্ তথা সংরক্ষিতকারীদের দরজা। তাতে একজন ফেরেশতা আছে। যার নাম ইসমায়ীল। তার অধীনে বার হাজার ফেরেশতা আছে। ওদের মধ্যকার ফেরেশতার অধীনে বার হাজার করে ফেরেশতা আছে তাফসীরে ত্ববারী, ১৫ খণ্ড, ১১ পৃষ্ঠা)। বাইহাকীর বর্ণনায় আছে, পৃথিবীর অতি নিকটবর্তী ফেরেশতার নাম ইসমায়ীল। তার সামনে আছে সত্তর হাজার ফেরেশতা। তার প্রত্যেক ফেরেশতার সাথে একলাখ ফেরেশতার বাহিনী আছে। তিনি বলেন, অতঃপর জিবরীল আকাশটির দরজা খোলার প্রার্থনা করলেন। বলা হল, কে? তিনি বললেন, জিবরীল। আবার বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ। বলা হয়, তার কাছে লোক পাঠানো হয়েছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর আদম (আ.) কে সেই আকৃতিতে দেখা গেল যে-আকৃতিতে আল্লাহ তাকে প্রথম দিনে সৃষ্টি করেছিলেন (তাফসীর ইবনে কাসীর ৩য় খন্ড, ১৩ পৃষ্ঠা)। তারপর আমাদের ২য় আসমানে চড়ানো হল। অতঃপর জিবরীল দরজা খোলার প্রার্থনা করলেন। তখন বলা হল, আপনি কে? তিনি বললেন জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ। বলা হল, তার কাছে (দূত) পাঠানো হয়েছে কি? তিনি বললেন, পাঠানো হয়েছে। অতঃপর আমাদের জন্য দরজা খোলা হল। হঠাত্ আমি দুই খালাতো ভাইকে পেলাম। তারা হলেন, ঈসা ইবনে মারয়্যাম এবং ইয়াহ্ইয়া ইবনে যাকারিয়্যা। তারা দু’জন আমাকে স্বাগতম জানালেন এবং আমার ভালোর জন্য দুআ দিলেন (মুসলিম, ১ম খন্ড, ৯১ পৃষ্ঠা)। তারপর আমাকে নিয়ে জিবরীল ৩য় আসমানে চড়লেন। অতঃপর দরজা খোলার আবেদন করলেন। বলা হল কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ। বলা হল, তার কাছে দূত পাঠানো হয়েছে কি? তিনি বললেন হ্যাঁ। এবার বলা হল তাঁকে স্বাগতম। অত:পর কি সুন্দর আগমন এটা। তারপর দরজা খোলা হল। অত:পর যখন আমি (৩য় আকাশে) পৌঁছলাম তখন ইউসুফকে পেলাম। জিবরীল বললেন, ইনি ইউসুফ। তাকে সালাম করুন। তাই আমি তাঁকে সালাম করলাম। তিনি সালামের জওয়াব দিলেন, তারপর বললেন, সত্ ভাই ও সত্ নবীকে স্বাগতম! (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৫২৭ পৃষ্ঠা)। অন্য বর্ণানায় আছে, ইউসুফকে দুনিয়ার অর্ধেক সৌন্দর্য দান করা হয়েছে। (মুসলিম ১ম খণ্ড, ৯১ পৃষ্ঠা)। আর এক বর্ণনায় আছে, তিনি পূর্ণিমার চাঁদের মত (তাহযীবু সীরাতে ইবনে হিশাম, ১ম খণ্ড ৯৩ পৃষ্ঠা)।তারপর একে একে চতুর্থ আকাশে হযরত ইদ্রিস (আ.), পঞ্চম আকাশে হযরত হারুন (আ.), ষষ্ঠ আকাশে হযরত মুসা (আ.)-এর সাথে সাক্ষাত্ করলেন।তারপর সপ্তম আসমানে হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সাথে সাক্ষাত্ হলে—জিবরীল (আ.) বললেন, ইনি আপনার বংশ পিতা, তাঁকে সালাম করুন। তাই আমি তাকে সালাম দিলাম। তিনিও সালামের জবাব দিলেন এবং বললেন সত্ পুত্র ও সত্ নবীকে স্বাগতম।তারপর আমাকে সিদ্রাতুল মুন্তাহা পর্যন্ত তোলা হল। অত:পর হঠাত্ দেখলাম, ওর ফলগুলো বড় বড় কলসির মত এবং ওর পাতাগুলো হাতীর কানের মত। তিনি বললেন, এটা সিদ্রাতুল মুন্তাহা। ওখানে ৪টি নদী আছে। দুটি নদী ভেতরমুখী এবং দুটি নদী বাহিরমুখী। আমি বললাম, এ দুটি কি? হে জিবরায়ীল! তিনি বললেন, ভেতরমুখী দুটো জান্নাতের মধ্যকার নদী। আর বাহিরমুখী দু’টি (মিসরের) নীল এবং (ইরাকের) ফোরাত নদী। তারপর আমার জন্য বাইতুল মা’মূরকে তোলা হল। তারপর আমার কাছে কতিপয় পাত্র আনা হল- মদের পাত্র ও দুধের পাত্র এবং মধুর পাত্র। আমি দুধটাকে গ্রহণ করলাম। জিবরীল বললেন, এটাই তো প্রকৃত স্বভাব যার উপরে আপনি আছেন এবং আপনার উম্মতও আছেন (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত, ৫২৭ পৃষ্ঠা)। অন্য বর্ণনায় আছে, আমি আসমানে বাইতুল মামুরে পিট ঠেকিয়ে সুন্দরতম পুরুষের বেশে আমাদের বংশ পিতা হযরত ইবরাহীমকে দেখলাম। তার সঙ্গে কিছু লোকও ছিল। আত:পর আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনিও আমাকে সালাম দিলেন। অতঃপর আমি আমার উম্মতকে দু’টি দলে দেখলাম। একটি ভাগ এমন যাদের দেহে সাদা কাপড় রয়েছে। তারা যেন কাগজের মত। আর একটি ভাগ এমন যাদের দেহে ছাইরং কাপড় রয়েছে। অত:পর আমি বাইতুল মামূরে প্রবেশ করলাম। এমতাবস্থায় আমার সাথে তারাও ঢুকলো যারা সাদা কাপড় পরিহিত ছিল। তারা একপাশে থাকলো। তবে তারা ভার অবস্থায় ছিল। আমি এবং সঙ্গীরা বাইতুল মামূরে নামাজ পড়লাম। তারপর আমি এবং সঙ্গীরা বেরিয়ে এলাম। তিনি (জিবরীল) বলেন, বাইতুল মামূর এমন ঘর যাতে প্রত্যেক দিন সত্তর হাজার ফেরেশ্তা নামাজ পড়েন তারপর কেয়ামত পর্যন্ত তারা ফিরে আসার সুযোগ আর পায় না (বাইহাকীর দালা-য়িলুন নুবুওঅহ্, ২য় খন্ড ১৩৯ পৃষ্ঠা)। (সংক্ষেপিত)
– দৈনিক ইত্তেফাক অবলম্বনে