Uncategorized

সম্প্রীতির বিজ্ঞাপনপ্রীতি


শুধু বিজ্ঞাপন করে যে কজন তারকা, তাঁদের একজন সম্প্রীতি রেজওয়ানা রহমান। তাঁর ঝুলিতে আছে প্যারাশুট, ওয়ারিদ, রবি থ্রিজির মতো জনপ্রিয় সব টিভিসি। তাঁকে নিয়ে লিখেছেন আল মাসিদ, ছবি তুলেছেন শামছুল হক রিপন
‘২০০৯ সাল। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে পড়ি। বসুন্ধরা ক্যাম্পাসে মাঝেমধ্যে কথা হতো অমিতাভ রেজার এক সহকারীর সঙ্গে। তখন এয়ারটেল ছিল ওয়ারিদ। ওয়ারিদের একটি টিভিসির জন্য নতুন মডেল খোঁজা হচ্ছিল। টিভিসিটি নির্মাণ করবেন অমিতাভ রেজা। দেখেই অমিতাভ রেজার সহকারী টিভিসিটি করার প্রস্তাব দেন আমাকে। রাজি হয়ে যাই।’
বিজ্ঞাপন তারকা সম্প্রীতির শুরুর গল্পটি এভাবেই জানালেন তিনি। এরপর ওয়ারিদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হয়ে দুই বছরে আরো চারটি টিভিসিতে মডেল হয়েছেন।
তবে প্রথম বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ের সময়ই সম্প্রীতির কাজে মুগ্ধ অমিতাভ রেজা। এরপর তাঁর নির্দেশনায় আরো বেশ কটি টিভিসিতে মডেল হয়েছেন তিনি। যার একটি সম্প্রীতির ক্যারিয়ারের সবচেয়ে আলোচিত-টিভিসি প্যারাশুট নারিকেল তেল। বড় বাজেটের এই কাজটি পেতে সম্প্রীতিকে প্রতিষ্ঠিত মডেলদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে, অডিশন দিয়ে সেরাটা দেখাতে হয়েছিল। সব শেষে অমিতাভ রেজা ও ক্লায়েন্ট সম্প্রীতিকেই বেছে নেন। shomprity  9600
কাজটি প্রচার হওয়ার পর সম্প্রীতির বৃহস্পতি তুঙ্গে! সাধারণ দর্শক থেকে শুরু করে পরিচালক-ক্লায়েন্ট সবার বাহবা পেলেন। সম্প্রীতি বলেন, ‘প্যারাশুটের বিজ্ঞাপনটির শুটিং হয়েছিল ২০১০ সালে। মোট চার দিন কাজ করেছিলাম। আমার চুল পারফেক্ট করতে হেভি পারিশ্রমিকে ভারত থেকে একজন হেয়ার এক্সপার্ট আনা হয়। যিনি বলিউড তারকা শিল্পা শেঠি ও কারিনা কাপুরের হেয়ার ট্রিটমেন্ট করেন। এটা আমার সলো পারফরমেন্স ছিল, পুরো চার দিন আমিই ছিলাম সবার আগ্রহের কেন্দ্রে। পারফরমেন্স ভালো হলে সবাই খুশি হতো, আর খারাপ হলে মন খারাপ।’
এই টিভিসিতে সারা দিন গর্জিয়াস থাকার বার্তা দেন সম্প্রীতি। এটি প্রচারের পর তাঁর ক্যারিয়ার আরো গর্জিয়াস হয়ে যায়। এর পরের বছর তিনি মডেল হন কিরণ মেহেদির পরিচালনায় অভিনেতা আফরান নিশোর বিপরীতে ফ্রুটি চ্যাপস্টিকের টিভিসিতে। দারুণ জনপ্রিয়তা পাওয়ায় এটিও দীর্ঘ চার বছর ধরে প্রচার হচ্ছে। কাজটি করতে গিয়ে সম্প্রীতিকে পড়তে হয়েছিল মহা বিপাকে। তিনি কিছুতেই নিশোর সঙ্গে রোমান্টিক অভিনয় করতে পারছিলেন না। অবশেষে সহায়ক হয় প্রকৃতি। শুটিংয়ের প্রথম দিনেই শুরু হয় তুমুল বৃষ্টি। তাই শিডিউলের বেশিরভাগ সময়ই কাজ হয়নি। এই সুযোগে সহকর্মী নিশোর সঙ্গে তুমুল আড্ডা জমে ওঠে সম্প্রীতির। তাঁরা হয়ে ওঠেন ভালো বন্ধু। এরপর কাজ শুরু হলে রোমান্টিক মুডগুলো তরতরিয়ে ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো তার। এতটাই প্রাণবন্ত হয় যে ক্লায়েন্টরা সিদ্ধান্ত নেন, এই জুটির ছবিই থাকবে তাঁদের পণ্যের মোড়কে।
সম্প্রীতি আরেকটি মজার ঘটনা ঘটিয়েছিলেন ২০১২ সালে র‌্যাম্প মডেল তানভীরের বিপরীতে প্রাণ গুঁড়া মসলার টিভিসি করতে গিয়ে। এই টিভিসির মাধ্যমেই সুইট ও শান্ত মেয়ের খোলস ভেঙে বেরিয়ে আসেন তিনি। এখানে তাঁকে দুটি চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে হয়েছিল। প্রথমে সদ্য বিবাহিত রোমান্টিক এক বউ, পরে ঝগড়াটে মহিলার চরিত্র। যার ভয়ে তটস্থ থাকে মসলা বিক্রেতা পর্যন্ত। সবাই বলছিল, সম্প্রীতি যে পরিমাণ সুইট একটা মেয়ে, ও কি পারবে ঝগড়াটে ভাবটা ফোটাতে? আর এই কথাটাতেই মনে মনে জিদ হলো সম্প্রীতির। তাঁর দেখিয়ে দিতে হবে, আমিও ঝগড়া করতে পারি।
‘শুটিংয়ের প্রথম দিন রোমান্টিক দৃশ্য করেছি। তেমন কেউ দেখতে আসেনি। কিন্তু দ্বিতীয় দিন যখন সবাই শুনেছে আমি আজ ঝগড়ার দৃশ্য করব, তাই দেখতে ইউনিটের বাইরে এজেন্সির প্রায় ২০ জন লোক জমা হয়েছিল। আমি মনে মনে আরো ফুঁসছি। শুটিং শুরুর আগেই স্পটবয় থেকে ডিরেক্টর যাকে পাচ্ছি, খালি ঝাড়ির ওপর রাখছি। সবার তো গালে হাত! সম্প্রীতির আজ হলো কী? পরে আমি ঝগড়াটা এতই ভালো করলাম যে এক টেকেই পুরোটা ওকে! এমনকি টিভিসিটি প্রচারের পর অনেকে আমাকে বলত, ‘ঘষে ঘষে পাথরের গুঁড়া দিলে কিন্তু, একেবারে…।’
এরপর সম্প্রীতি আবার কাজ করেন অমিতাভ রেজার নির্দেশনায় ‘রবি থ্রিজি’র টিভিসিতে। এখানে তিনি ইন্টারন্যাশনাল কম্পিটিশনে বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করা একমাত্র নৃত্যশিল্পী। এই বিজ্ঞাপনটি সম্প্রীতির দারুণ প্রিয়। কারণ ছোটবেলা থেকে কিছু বোঝার আগেই যে নাচের সঙ্গে বসবাস। সেই নাচ দিয়েই এবার বাজিমাত!
সম্প্রীতির নতুন একটি টিভিসি নিয়মিত প্রচার হচ্ছে ইদানীং। এ টিভিসিতে তাঁর মুখের পিম্পল সেরে গেছে দেখে পিছু নেয় ইয়াং ছেলেপেলে। অ্যাকনিস ফেসওয়াশ নামের এ পণ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবেও কাজ করছেন তিনি।
‘বিজ্ঞাপনেই থাকতে চাই। এখানে নিজেকে যতটা পারা যায় তুলে ধরব। এ ভুবনই আমার শেষ ঠিকানা।’ বললেন সম্প্রীতি। আসলে বিজ্ঞাপনের সঙ্গেই তাঁর যত প্রীতি।