বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৩৯ দিনেই মঙ্গলযাত্রা?

মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার স্বপ্ন মানুষ বহু আগে থেকেই দেখছে। সেখানে প্রাণ ধারণের উপযোগী পরিবেশের খোঁজে অনুসন্ধানী গবেষণাও চলছে। দীর্ঘ দূরত্বের কারণে ‘লাল গ্রহে’ পৌঁছানো বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক রকেট নির্মাণ ও পরিচালনাকারী একটি প্রতিষ্ঠান এবার বিশেষ এক ধরনের ইঞ্জিন তৈরির কাজ শুরু করেছে। এতে চড়ে মানুষ মাত্র ৩৯ দিনেই মঙ্গলপৃষ্ঠে পৌঁছাতে পারবে বলে গবেষকেরা দাবি করছেন।
টেক্সাসের অ্যাড অ্যাস্ট্রো রকেট কোম্পানির ওই নির্মাণকাজের অর্থায়নে রয়েছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা)। ইঞ্জিনটির নাম দেওয়া হয়েছে ভ্যারিয়েবল স্পেসিফিক ইমপালস ম্যাগনেটোপ্লাজমা রকেট বা ভিএএসআইএমআর। মঙ্গল গ্রহে ইতিমধ্যে একাধিক রোবটযান পাঠানো হয়েছে। সেখানে মহাকাশযান পৌঁছাতে কয়েক মাস সময় লেগে যায়। প্রতিকূল পরিবেশে এত দীর্ঘ ভ্রমণের ধকল সামলানো মানুষের পক্ষে সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। তাই অভিযানকে তুলনামূলক সংক্ষিপ্ত করার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
অ্যাড অ্যাস্ট্রো রকেট কোম্পানির প্রধান নির্বাহী ফ্রাঙ্কলিন চ্যাং-ডায়াজ বলেন, নতুন রকেট ইঞ্জিন প্রযুক্তিটি বৈপ্লবিক সম্ভাবনা তৈরি করতে যাচ্ছে। কারণ, এটি অতীতের যেকোনো রকেটের চেয়ে ভিন্ন। এটি প্লাজমা রকেট। ভিএএসআইএমআর রকেট কোনো নভোযান উৎক্ষেপণের জন্য ব্যবহৃত হবে না, বরং ইতিমধ্যে মহাকাশে অবস্থানরত কোনো বস্তুর জন্য প্রয়োগ করা হয়।
প্লাজমা হচ্ছে বৈদ্যুতিকভাবে চার্জ করা এক ধরনের গ্যাস। এই প্লাজমাকে উত্তপ্ত করে অত্যন্ত উচ্চ তাপমাত্রায় নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে ভিএএসআইএমআর ইঞ্জিন কাজ করে। এ কাজে বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়। তখন শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রগুলো ওই প্লাজমাকে ইঞ্জিনের পেছন দিকে বের করে আনে। এতে প্রবল ধাক্কা তৈরি হয়, যার সাহায্যে ইঞ্জিনটি অত্যন্ত উচ্চ গতি অর্জন করে।
প্লাজমা রকেট প্রযুক্তিটি নাসার পছন্দ হয়েছে। তারা এটির উন্নয়ন এবং পূর্ণাঙ্গ ইঞ্জিন নির্মাণের জন্য অ্যাড অ্যাস্ট্রো রকেট কোম্পানিকে এক কোটি মার্কিন ডলার দেবে। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তারা ভিএএসআইএমআর ইঞ্জিন ব্যবহারের মাধ্যমে এক বছরে রকেটের হাজারো গ্যালন জ্বালানির অপচয় রোধ করতে পারবে।
নতুন রকেটটিতে প্লাজমার পাশাপাশি চুম্বকও ব্যবহৃত হবে। আর এটি কোনো নভোযান উৎক্ষেপণ করতে না পারলেও মঙ্গলের আবহমণ্ডল থেকে বেরিয়ে আসার পর সেখানে নভোযানের গতি অনেক বাড়িয়ে দিতে পারবে। পৃথিবীর কাছাকাছি বিভিন্ন দূরত্বে পাঠানো নভোযানে সৌরশক্তি ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু মঙ্গলে যাওয়ার জন্য আরও শক্তিশালী মহাকাশযান প্রয়োজন, যার ক্ষমতা হবে অনেকটা পারমাণবিক বিদ্যুতের কাছাকাছি পর্যায়ের।
সূত্র: হাফিংটন পোস্ট ও আইএএনএস।
কৃতঙ্গতায়: প্রথমআলো