বিনোদন

ক্যাবলা ছেলের চটপটে গার্লফ্রেন্ড সাফা


masidrono2নাটকে খুব একটা দেখা দেন না। তবে নতুন নতুন টিভিসিতে নতুন নতুন রূপে নিয়মিত দেখা যায় সাফা কবিরকে। তরুন প্রজন্মের কাছে বেশি প্রিয় এই তারকাকে নিয়ে লিখেছেন মাসিদ রণ ;  ছবি তুলেছেন শামছুল হক রিপন।

ছোটবেলায় পুতুল নিয়ে খুব খেলতেন। একটু বড় হতেই পুতুলকে কাপড় পরিয়ে সাজানোর চেয়ে মন বেশি যেত তাঁর খেলনার যন্ত্রপাতির দিকে। মা-বাবা বুঝতে পারলেন, মেয়ে ইঞ্জিনিয়ার হবে! কিন্তু স্কুলের বারান্দায় পা রাখতেই আকাশে উড়োজাহাজ দেখলে সেদিকে অপলক চেয়ে থাকতেন। শিক্ষকরা ভাবলেন, ছাত্রী পাইলট হবে! মাধ্যমিকে যেতেই শর্টস-টিশার্ট ফেলে গায়ে জড়ালেন রঙিন কুর্তি, নানা ঢঙের ফ্রগ আর টপস। তখন নিজেই ভাবলেন, বড় হয়ে ফ্যাশন ডিজাইনার হবেন। কিন্তু ঠিক বড় হওয়ার আগেই হয়ে উঠলেন দেশের জনপ্রিয় একজন মডেল-অভিনেত্রী। টিভি বিজ্ঞাপনের পরিচিত মুখ সাফা কবির।IMG_5027

এয়ারটেল প্রযোজিত আদনান আল রাজিবের পরিচালনায় ‘এইটিন অল টাইম দৌড়ের উপর’ টেলিছবির মাধ্যমে অনেকটা হঠাৎ করেই মিডিয়ায় কাজ শুরু করেন সাফা। ‘আমি বসের (আদনান আল রাজিব) ফেসবুক ফ্রেন্ড ছিলাম। একদিন তিনি আমার ফোন নম্বর চেয়ে ফোন করে অভিনয়ের প্রস্তাব দিলেন। আম্মুর মোটামুটি ইচ্ছা ছিল যে আমি মিডিয়ায় কাজ করি। তাই রাজি হয়ে গেলাম। ছোট্ট একটা চরিত্র ছিল সেখানে।’ মিডিয়ায় আসার গল্প শোনাচ্ছিলেন সাফা কবির।

তবে সাফাকে সবাই চিনতে শুরু করে বিপুলের নির্দেশনায় করা এয়ারটেলের একটি অফারের টিভি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। তবে নিজের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে মনে করেন রাহাত রহমানের পরিচালনায় প্রাণ পিনাট বারের টিভিসিকে। এতে দেখা যায়, একটা ক্যাবলা ছেলের চটপটে গার্লফ্রেন্ড সাফা। প্রেমিকার মন পেতে বয়ফ্রেন্ড তাকে একটি তোতা পাখি গিফট করতে চায়। কিন্তু প্রচণ্ড ডমিনেটিং টাইপের সাফা দোকানিকে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকেন, ‘আপনার তোতা শিস দেয়?’, ‘আপনার তোতা ইংরেজি বোঝে?’ দোকানিও বলে চলে তোতার গুণ। কিন্তু সাফার শেষ প্রশ্নে তোতাপ্রশংসায় পঞ্চমুখ দোকানির মুখ ভোঁতা হয়ে যায়। আর এই প্রশ্নটি হলো, ‘আপনার তোতা ফেসবুকিং পারে?’ তখনই ব্যাকগ্রাউন্ডে ভরাট কণ্ঠে ভয়েস আসে, ‘সব কিছু কি আর মনের মতো হয় রে পাগলা…, প্রাণ পিনাট বারেই আছে পরিমাণমতো চিনি, ময়দা…।’

তবে পুরো বিজ্ঞাপনের এত ডায়ালগের মধ্যে সাফার কণ্ঠে কটমট করে বলা ‘ফেসবুকিং পারে না’ ডায়ালগটি তরুণদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে।

‘এই টিভিসির শুটিং হয়েছিল তেজগাঁওয়ের কোক স্টুডিওতে। ওখানেই আস্ত একটা পাখির দোকান করা হয়। এক দিনেই আমরা শুটিং শেষ করেছিলাম। তবে প্রথমে আমি চরিত্রটা একদমই ধরতে পারছিলাম না। কারণ আমি বাস্তবে কখনোই এমন রূঢ় হতে পারছিলাম না। ডিরেক্টর রাহাত ভাই বললেন, ইচ্ছামতো গালিগালাজ করো, দেখবা মেজাজ খারাপ হয়ে যাবে, আর তোমার চরিত্রটাও করতে সুবিধা হবে। কিন্তু খালিখালি গালি তো আসে না মুখে। পরে সামনে একটা গ্লাস পেয়ে তা ছুড়ে মারি। ভেঙে গেলে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। তারপরই গড়গড় করে সব ডায়ালগ চমৎকারভাবে দিতে থাকি।’ বলছিলেন সাফা।IMG_5056

এই টিভিসির জন্য তাঁকে ৩০টির মতো পিনাট বার খেতে হয়েছিল। এর চেয়ে বেশি খেতে হয়েছিল ইগলু আইসক্রিমের টিভিসির কাজ করতে গিয়ে।

সাফা বলেন, ‘আমার স্পষ্ট মনে আছে, শুটিংয়ের দিন সকালে এক ফ্রিজ আইসক্রিম আনা হয়েছিল। অবাক হলাম, এত আইসক্রিম! কিন্তু পরে বুঝলাম, এক ফ্রিজই ঠিক আছে। এক্সপ্রেশন ঠিক হচ্ছিল না বলে পুরো এক ফ্রিজ আইসক্রিম নষ্ট হয়েছিল। পরে তো দাঁতের শিরশিরানিতে কয়েক দিন কিছুই খেতে পারিনি।’IMG_5040

এমন আরো একটা ঘটনা আছে। এটা ছিল ২০১২ সালে তাঁর ক্যারিয়ারের প্রথম টিভিসি এয়ারটেলের শুটিংয়ের সময়। এখানে শুধু ‘গো’ শব্দটাই ছিল সাফার ডায়ালগ।

অথচ এটুকু বলতে ৫০ বারেরও বেশিসংখ্যক শট দিতে হয়েছিল তাঁকে।

IMG_5013তবে ক্যারিয়ারের তিন বছরে অনেক কিছুই শিখেছেন সাফা। যেমন-সপ্তাহ দুয়েক আগে এয়ারটেলের নতুন একটি টিভিসি করেছেন তিনি। পরিচালক বাশার কাজটি করেছেন স্টপ মোশনে (অসংখ্য স্থিরচিত্র জোড়া দিয়ে ভিডিও বানানোর পদ্ধতি)। এই টিভিসির জন্য আলাদা আলাদা এক্সপ্রেশনে প্রায় পাঁচ হাজার স্টিল ছবির পোজ দিতে হয়েছে সাফাকে। অথচ এই কঠিন কাজটি তিনি মাত্র এক দিনেই করে ফেলেছেন। এটা শেখারই ফল।

এই বিজ্ঞাপনে কেমন করেছেন তা দর্শক খুব শিগগিরই টিভিতে দেখতে পাবেন। দর্শকের ভালো লাগলে সেই অনুপ্রেরণা নিয়ে আজীবন মডেল হিসেবে কাজ করতে চান সাফা কবির।

এখন পর্যন্ত তাঁর উল্লেখযোগ্য টিভি বিজ্ঞাপন হলো, এয়ারটেলের দুটি টিভিসি, প্যারাশুট নারকেল তেল, প্রাণ পিনাট বার, ইগলু আইসক্রিম, ক্লোজআপ কাছে আসার সাহসী গল্প। টিভিসিগুলো দর্শক খুব পছন্দ করেছে।

বর্তমানে ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে সাফার গোল্ডমেরী বিস্কুটের টিভিসিটিও প্রচারিত হচ্ছে। এটিও বেশ হিট। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাফার প্রশংসায় ভক্তরা।