বিনোদন

ফ্যাশন সচেতন আমব্রিন


masid rono1আমব্রিনকে এখন সবাই ক্রিকেট উপস্থাপিকা হিসেবেই চেনেন। বিপিএলে সাবলীল উপস্থাপনার জন্য আন্তর্জাতিক একটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইটের জরিপে বিশ্বের সেরা পাঁচ মহিলা ক্রিকেট উপস্থাপিকার একজনও হয়েছেন তিনি। ক্রিকেটের পর তিনি এখন বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্ণামেন্টও উপস্থাপনা করছেন। তবে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই তারকা হয়ে ওঠেন আমব্রিন। তাঁকে নিয়ে লিখেছেন মাসিদ রণ। ছবি তুলেছেন শামছুল হক রিপন

আট বছরে তিনি করেছেন মাত্র ১৫টির মতো টিভিসি। কিন্তু কম কাজেও যে মানুষের মনের মধ্যে স্থায়ী আসন গেড়ে বসা যায়, তা প্রমাণ করলেন আমব্রিন। আজ সবাই তাকে ক্রিকেটের উপস্থাপিকা হিসেবে চিনলেও এ রকম দারুণ সব সুযোগ পাওয়ার পেছনে আমব্রিনের করা কিছু বিজ্ঞাপনই  বেশি ভূমিকা রেখেছে। আমব্রিন বলেন, ‘কখনো চাইনি নিজেকে সারাক্ষণ টিভিতে দেখা যাক। বরং আমার লক্ষ্য হলো ভিন্ন কিছু দেওয়া। তাই যেনতেন প্রস্তাবে রাজি না হয়ে ব্যতিক্রমী ও ভালো মানের কাজ করে গেছি। আর তাতেই বেশি দর্শক সাড়া পেয়েছি।’

শুধু কাজ নয়, নিজেকে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে বরাবরই আলাদা এই তারকা। বিন্দাস চলাফেরা করাটা তাঁর পছন্দ। ফ্যাশনে ব্যাপক এক্সপেরিমেন্ট করতে ভালোবাসেন। দেশি কোনো তারকাকে অনুকরণের চেষ্টা তাঁর নেই। বরং তাঁর ফ্যাশন যাতে অন্যরা ফলো করে সেটাই চান তিনি। মেকআপ-গেটআপ নিয়ে তাঁর বিস্তর চিন্তা রয়েছে। বিদেশ থেকে রূপসজ্জার ওপর কোর্সও করে এসেছেন। ইস্কাটনে খুলেছেন নিজের পার্লার ‘আমব্রিনস’। তাঁর এই রূপ সচেতনতা টের পাওয়া গেছে পুরো বিপিএল জুড়ে।  বিশ্বের এত দেশের এত এত উপস্থাপিকার মধ্যে তিনি সেরা পাঁচ মহিলা ক্রিকেট উপস্থাপিকার একজন হয়েছেন।ambrin3

শুধু কি উপস্থাপনা? যে বিজ্ঞাপন আমব্রিনকে তারকা বানিয়েছে, সেসব বিজ্ঞাপনেও তিনি প্রতিবার আলাদাভাবে নিজেকে তুলে ধরেছেন। টিভিসির গল্প ও চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলতে নানা ধরনের এক্সপেরিমেন্ট করেছেন। যেমন মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর নির্দেশনায় ‘গোল্ডেন হার্ভেস্ট ফ্রেন্স ফ্রাই’-এর টিভিসিতে আমব্রিন থাকেন পুরান ঢাকার মেয়ে। মুখে পুরান ঢাকার ভাষার পাশাপাশি পোশাকে-আশাকেও সেখানকার একজন লোকাল মেয়ে হিসেবে বিজ্ঞাপনটিতে তাকে দেখা যায়। জংলি ছাপার সুতি সালোয়ার-কামিজ পরে জনপ্রিয় অভিনেতা মুকিতের সঙ্গে ঝগড়া করতে দেখা যায় তাঁকে। ২০১২ সালের দিকে প্রচারিত হওয়া এই টিভিসির ডায়ালগগুলো বেশ জনপ্রিয় হয় সে সময়, বিশেষ করে আমব্রিনের মুখে ‘ফুল আনছোছ ক্যালা, ফুল খাইলে কি প্যাট ভরে’ এই ডায়ালগটি প্রায়ই শুনতে হয় তাঁকে। অনেক নির্মাতা টিভিসিটি দেখে ভেবেই বসেছিলেন যে আমব্রিন সত্যি সত্যিই পুরান ঢাকার মেয়ে। আর তাই সে সময় পুরান ঢাকার ভাষায় তৈরি অনেক টিভিসির অফার পান এই লাক্স তারকা। কিন্তু আমব্রিনের ওই এক কথা—একই ধরনের চরিত্রে বারবার নয়। এই টিভিসিটি নিয়ে আমব্রিন বলেন, ‘আমার স্পষ্ট মনে আছে ফারুকী ভাই নিজে ফেসবুকে নক করে আমাকে কাজটি দেন। কিন্তু আমি একদমই বিশ্বাস করিনি। কারণ ফারুকী ভাইয়ের মতো একজন পরিচালকের কাজ এমন সহজে পাওয়ার চিন্তা করাটাও বোকামি। তবুও মাকে নিয়ে তেজগাঁওয়ে ভাই-বেরাদরের অফিসে যাই। গিয়ে তো কাউকে চিনি না। ভয় পাচ্ছিলাম, এরা কি হাইজ্যাকার-টাইজ্যাকার কি না, এই ভেবে। পরে ফারুকী ভাইয়ের ছোট ভাই কিবরিয়া আমাকে আশ্বস্ত করলেন। জানতে পারি ফারুকী ভাই আমার চেহারায় নাকি ঝগড়াটে একটা ভাব দেখতে পেয়েছিলেন।’

পিপলু আর খানের ‘বাংলালিংক দেশ ৫’ করে সবচেয়ে আলোচিত হন আমব্রিন। এতে শখ-সারিকা-আরেফিন শুভকে নিলয়ের বোনের বিয়েতে নাচতে দেখা যায়। আর যাঁর বিয়ে, তিনিই আমব্রিন।

এরপর তো বাংলালিংকের সঙ্গে তিন বছরের চুক্তি হয়। তখন বৈশাখী অফার নিয়ে বাংলালিংক দেশ ৬ ও ৭ টিভিসি দুটিও করেন। তবে নিজের করা বাংলালিংকের বিজ্ঞাপনের মধ্যে ‘বাংলালিংক দেশ অ্যাডভান্সড’ টিভিসিটি সবচেয়ে প্রিয় তাঁর।ambrin2

এই টিভিসিতে নাকি সবচেয়ে ভালো পারফরম্যান্স করেছেন তিনি। টিভিসির গল্পটিও অনেক মজার। এতে দেখা যায়—কক্সবাজারে হানিমুনে গিয়েছে সদ্য বিবাহিত এক দম্পতি। হাজব্যান্ড দুটি ডাব দিয়ে এসেছে স্ত্রীর কাছে। কিন্তু অজানা কারণে স্ত্রীর মুড অফ। সে বলে, ‘তুমি ভুলে গেছ আজ কোন দিন?’ স্বামী ওভার স্মার্টনেস দেখিয়ে বলে, ‘ভুলব কেন জান। দেরি করে উইশ করলে ব্যাপারটা স্পেশাল হয়। হ্যাপি বার্থ ডে’, এই কথা শুনে স্ত্রী তো আরো বেশি রেগে গিয়ে কাঁদতে থাকে। পরে নিজেই বলে, ‘তুমি ভুলে গেছ, গত বছরের এই দিন তুমি আমাকে প্রথম শাড়ি পরা দেখেছিলে!’ তখন তো স্বামীর হতভম্ব অবস্থা। পরে দেখা যায় স্বামী ‘বাংলালিংক দেশ অ্যাডভান্সড’ প্যাকেজ নিয়েছে বলে এখন আর ভুল হয় না কিছুই। কারণ বিশেষ দিবসগুলোর জন্য আগেই তথ্য দিয়ে রাখলে ঠিক সময়ে এমনিতেই এসএমএস মনে করিয়ে দেয়।

আমব্রিনের করা জনপ্রিয় টিভিসির মধ্যে আরো রয়েছে তানভীরের করা বাংলালিংক কল ব্লক, আফজাল হোসেনের পরিচালনায় এইডসের টিভিসি (আমব্রিনের প্রথম টিভিসি), কিউট নিম সাবান, বেঙ্গল কনটেইনার, মোজো, বস ফ্রিজ ও বসুন্ধরা আবাসন প্রকল্প।

এ ছাড়া গত ডিসেম্বরেই করেছেন দুটি নতুন টিভিসি। তা হলো আয়শা মেমোরিয়াল হসপিটাল ও ভিম ডিটারজেন্ট পাউডার।