লাইফ স্টাইল

স্বপ্ন বাংলাদেশ ঘিরে, তাই ইউরোপ ছেড়েছি : বিবি রাসেল


masid‘বেগম রোকেয়া পদক ২০১৫’ পেয়েছেন। আপনাকে অভিনন্দন।

আমি দেশ-বিদেশে অনেক পুরস্কার পেয়েছি। এর মধ্যে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কারও আছে। কিন্তু বেগম রোকেয়া পদক পাওয়ার কোনো তুলনা হয় না। বেগম রোকেয়ার ছায়া আমার ওপর পড়েছে সেই ছোটবেলাতেই। আমার বাবা রংপুরের মানুষ। তাই রোকেয়ার প্রতি তাঁর আলাদা অনুভূতি ছিল। তিনি চাইতেন তাঁর সব ছেলেমেয়ে রোকেয়াকে জানুক, তাঁর শক্তি ধারণ করুক। আমি তেমন সময়ে ফ্যাশন গ্র্যাজুয়েট হয়েছি, যখন এ দেশে ফ্যাশন শব্দটা ভালো চেনা ছিল না। এখন আমি তাঁতিদের নিয়ে কাজ করছি। এই পুরস্কার পাওয়ার পেছনে এটাও একটি কারণ।

আমার রোল এক হোক,চাইতাম নাপ্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে রোকেয়া পদক নিচ্ছেন বিবি রাসেল

আপনি ছোটবেলার কথা আরেকটু বলুন।

খুব ছোটবেলায়ই আমি এটা-ওটা বানাতাম। অন্য বোনদের মা-বাবা যে পোশাক দিতেন, তাতে ওরা খুশি হতো। কিন্তু আমি বরাবরই খুঁত ধরতাম। তাই বাবা মাত্র ১০ বছর বয়সে আমাকে সেলাই মেশিন কিনে দেন। আমি নিজের মতো করে জামা-কাপড় বানাতাম। কখনো নিজের, কখনো পুতুলের। আমি বাজারে গেলে মাছ বিক্রেতার ময়লা লুঙ্গি দেখতাম। বাদ দিতাম না গামছাটাও। গ্রামের মহিলাদের ডুরে শাড়িও আমাকে আকৃষ্ট করত। আমি চাইতাম না, আমার রোল নম্বর ১ হোক। পাছে মা-বাবা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে বলেন!

 

ফ্যাশন দুনিয়ায় গেলেন কিভাবে?

ঝোঁকটা ছোটবেলা থেকেই ছিল। বাবা এক দিন কোকো শ্যানেলকে নিয়ে লেখা একটি বই বাড়িতে আনেন। সেটি দেখার পর মনে হলো, আমিও পারব। আমি লন্ডনে গেলাম ফ্যাশন পড়ার জন্য।

আপনার ইউরোপে কাটানো দিনগুলো কেমন ছিল? বিশেষ করে প্যারিস…

আমি কিন্তু মডেল হতে যাইনি। আমাদের দেশে আমার মতো দেখতে একটা মেয়ে মডেল হতে পারে—ভাবনায়ও আনবে না কেউ। কিন্তু ইউরোপের চিন্তাভাবনার ধরন আলাদা। তাই ওখানে কেউ কেউ আমাকে বলেছে, তোমার উচ্চতা পাঁচ ফুট ১০, গায়ের রং আলাদা, শারীরিক গড়ন ভালো, কেন মডেলিং করছ না? আমি ওদের কথায় কান দিতাম না। পরে ভেবে দেখলাম, স্বপ্ন পূরণের জন্য অনেক টাকা দরকার। তাই মডেলিং শুরু করলাম।

 

ইউরোপে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ছেড়ে বাংলাদেশে ফিরে এলেন কেন?

আমার স্বপ্ন বাংলাদেশ ঘিরে, তাই ইউরোপে পড়ে থাকার মানে হয় না। যাওয়ার সময়ই ভেবে রেখেছিলাম, তৈরি হয়ে দেশেই ফিরে আসব। এখন বাংলাদেশে তাঁতিদের সঙ্গে কাটানো সব মুহূর্তই মনে হয় অদ্ভুত আনন্দময়। আমার স্বপ্নের দরজাগুলো খুলে যায় একে একে।

 

আপনার বিবি প্রোডাকশনস কেমন চলছে?

১৯৯৪ সালে দেশে ফেরার পরের বছরই বিবি প্রোডাকশনস খুলেছি। দেশের থেকে বিদেশেই এখানকার পোশাকের চাহিদা বেশি। আর সেগুলো তৈরি করছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের তাঁতিরাই। আমি শুধু ডিজাইন দিই।

 

ভারতের রাজস্থানে আপনি কাজ করেছেন। অভিজ্ঞতা বলুন।

ভারত সরকার আমাকে দাওয়াত দিয়ে সেখানে নিয়ে যায় কয়েক মাসের জন্য। খাদি নিয়েই কাজ করি সেখানে। গত নভেম্বরেই আমার ডিজাইন করা পোশাক দিয়ে আন্তর্জাতিক মানের একটি ফ্যাশন শো হয়।

 

দেশে আপনার ফ্যাশন শো বেশি দেখা যায় না কেন?

ঠিকই বলেছেন, আমি দেশে অনেক বছর কোনো শো করি না। কারণ এখানে আমার স্পন্সর নেই। ইউরোপ থেকে যা আয় করি তা দিয়েই তাঁতিদের কাজ চলে। আমার আয়ের সবটাই গবেষণায় খরচ হয়ে যায়।